মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান সংঘাতের আবহে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠল ইস্রায়েল–ইয়েমেন সীমান্ত পরিস্থিতি। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ইয়েমেন থেকে নিক্ষেপিত একটি ড্রোন (Drone) ইস্রায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের বন্দর শহর এলাতে (Eilat) আঘাত হানে, যার ফলে অন্তত ২০ জন সাধারণ মানুষ আহত হন। আহতদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে স্থানীয় চিকিৎসাকর্মীরা।
স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে আকাশে ড্রোন শনাক্ত করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। তারা সেটিকে নামানোর চেষ্টা করে এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়। কিন্তু ড্রোনটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি এবং তা শহরের একাধিক অঞ্চলে বিস্ফোরণ ঘটায়। আহতদের মধ্যে অধিকাংশই রাস্তায় বা দোকানে অবস্থান করছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা দ্রুত এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তাদের দাবি, এটি গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ও ফিলিস্তিনিদের উপর “অত্যাচারের” প্রতিবাদে চালানো হয়েছে। হুথি মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, “যতদিন ফিলিস্তিনে দমন-পীড়ন চলবে, আমাদের প্রতিরোধ ততদিন চলবে। ইসরায়েলকে বুঝতে হবে, গাজার যন্ত্রণার প্রতিধ্বনি এখন ইয়েমেন থেকেও শোনা যাবে।”
হুথি বিদ্রোহীরা গত কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে একাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। এর বেশিরভাগই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিহত হলেও, বুধবারের এই হামলাটি তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, হুথিদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ছে এবং তারা এখন দীর্ঘপাল্লার আক্রমণ চালানোর ক্ষমতা অর্জন করেছে।
এলাত শহর ইসরায়েলের দক্ষিণ প্রান্তে লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত। এটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখান থেকেই ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও জ্বালানি আমদানি করে। এখন পর্যন্ত এই অঞ্চল তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ছিল, কিন্তু সর্বশেষ হামলার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জানিয়েছে, তারা হামলার উৎস শনাক্ত করছে এবং ইয়েমেন থেকে উৎক্ষেপিত ড্রোনের বিরুদ্ধে নতুন কৌশল গ্রহণ করবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “আমরা নাগরিকদের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। হামলার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। ইসরায়েলের আকাশসীমা সুরক্ষিত রাখতে আরও উন্নত প্রযুক্তি মোতায়েন করা হবে।”
ঘটনাটি আন্তর্জাতিক মহলেও আলোড়ন ফেলেছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কূটনীতিকরা বলছেন, ইয়েমেনের সংঘাত এখন শুধুমাত্র গৃহযুদ্ধের সীমারেখায় নেই, এটি একটি আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত হয়েছে যেখানে ইরান ও ইসরায়েল পরোক্ষভাবে মুখোমুখি।
হুথিদের এই ড্রোন হামলা প্রমাণ করে দিয়েছে যে গাজায় চলমান যুদ্ধ কেবল ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ছে এবং নতুন নতুন ফ্রন্ট খুলছে। এলাতে হামলার ফলে ইসরায়েলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে এবং আগামী দিনগুলোতে এই ধরনের আক্রমণের আশঙ্কা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
