পাকিস্তানে দুই অভিযানে ১২ জঙ্গি নিহত, নিরাপত্তা বাহিনী তৎপর

পাকিস্তানের কেপি (খাইবার পাখতুনখোয়া) এবং বালুচিস্তান প্রদেশে আলাদা দুটি অভিযানে (Terrorist operations) নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ১২ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। পাক সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইং আইএসপিআর…

Security Forces Kill One Terrorist in Srinagar, Operation Ongoing

পাকিস্তানের কেপি (খাইবার পাখতুনখোয়া) এবং বালুচিস্তান প্রদেশে আলাদা দুটি অভিযানে (Terrorist operations) নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ১২ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। পাক সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইং আইএসপিআর (Inter-Services Public Relations) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ১২ এবং ১৩ নভেম্বর রাতে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মীরানশাহ শহরের নর্থ ওয়াজিরিস্তান জেলা থেকে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর ৮ জঙ্গি নিহত হয়েছে, এবং আরও ৬ জন আহত হয়েছে।

এছাড়াও, একই সময় বালুচিস্তানের কেচ জেলার বালগাতর এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ৪ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন উচ্চমানের জঙ্গি কমান্ডারও ছিল, যাকে “সানা আলিয়াস বারু” নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই কমান্ডার বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)-এর মেজীদ ব্রিগেডের অন্যতম প্রধান সদস্য ছিলেন এবং সে আত্মঘাতী বোমা হামলার জন্য সুইসাইড বোম্বার নিয়োগের প্রধান দায়িত্বে ছিল।

   

বালুচিস্তানে জঙ্গি হামলা ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান
বালুচিস্তান প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের পর, আইএসপিআর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, এই অভিযান বিশেষভাবে কুইটা রেলওয়ে স্টেশন এবং করাচি বিমানবন্দর সংলগ্ন দুটি আত্মঘাতী বোমা হামলার প্রেক্ষাপটে চালানো হয়। কুইটা স্টেশনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২৭ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছে, যেখানে অধিকাংশই নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। অন্যদিকে, করাচি বিমানবন্দরের হামলায় ২ জন চীনা প্রকৌশলী নিহত হয়।

এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ), যাদের মেজীদ ব্রিগেডের অন্যতম প্রধান সদস্য ছিল সানা। এই জঙ্গি গোষ্ঠী পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের স্বাধীনতার দাবিতে কাজ করে আসছে এবং তাদের অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ সাধারণ জনগণ নিহত হয়।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সফল অভিযান
পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী এই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে তীব্র অভিযান চালিয়ে চলেছে। নিরাপত্তা বাহিনী গত বছরগুলিতে বেশ কয়েকটি সফল অভিযানে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর শক্তি হ্রাস করেছে, তবে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান এবং বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মির মত গোষ্ঠী এখনো পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে।

আইএসপিআরের বিবৃতি অনুসারে, পাক সেনাবাহিনী চলতি বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫০টিরও বেশি জঙ্গিকে হত্যা করেছে। বিশেষ করে, খাইবার পাখতুনখোয়া, বালুচিস্তান, এবং নর্থ ওয়াজিরিস্তানে এই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ এখনো অব্যাহত রয়েছে।

সরকারের অবস্থান
পাকিস্তানের সরকার এবং সেনাবাহিনী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটানোর পর এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এই ধরনের হামলার মাধ্যমে পাকিস্তানকে ভয় দেখানো যাবে না। সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোকে অবশ্যই দমন করতে হবে এবং দেশবাসীকে নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তান একযোগভাবে আন্তর্জাতিক মহলে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীসমূহের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা এবং সাহস সবসময় অপরিহার্য।”

অধিকাংশ হামলার পিছনে বাহিনী এবং দেশের সম্পর্ক
তবে পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় এখনও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সহানুভূতির ধারণা প্রচলিত রয়েছে। বিশেষ করে, কিছু অঞ্চলে বালুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের প্রতি এক ধরণের রাজনৈতিক এবং সামাজিক সমর্থন রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বালুচিস্তান প্রদেশে একাধিক সামরিক অভিযানে বাহিনী ও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জঙ্গি গোষ্ঠী এসব অঞ্চলে নতুন নতুন জঙ্গি নিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে চলেছে।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি
এদিকে, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে যে কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাতে দেশের ভিতরে এবং বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য হচ্ছে। তবে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর এবং প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, এসব গোষ্ঠীগুলোর কার্যকলাপকে দ্রুত সমাপ্ত করতে তাদের অবকাঠামো, সমর্থন এবং বিভিন্ন সূত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

পরবর্তীতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং অন্যান্য দেশগুলোর দৃষ্টি এখন পাকিস্তানের এই নিরাপত্তা অভিযানের দিকে। কিছু দেশ, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলো, পাকিস্তানের সাথে এই সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় একযোগ কাজ করার আহ্বান জানিয়ে আসছে।

পাকিস্তানে এই নতুন অভিযানগুলি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপের প্রতীক। আইএসপিআর-এর উদ্ধৃতি অনুসারে, নিরাপত্তা বাহিনী দেশের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের প্রতিটি পদক্ষেপের লক্ষ্য হচ্ছে পাকিস্তানের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।