কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ভোটার তালিকার (Bengal voter list) ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (SIR) প্রক্রিয়াকে ঘিরে সোমবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (CEC) জ্ঞানেশ কুমার কঠোর বার্তা দিলেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, BLO–দের সামান্য গাফিলতিও বরদাস্ত করা হবে না, কারণ ভোটার তালিকায় কোনও অসঙ্গতি সরাসরি নির্বাচনী নির্ভুলতাকে প্রভাবিত করে। নির্বাচনী আধিকারিক, ERO এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, “শূন্য সহনশীলতা নীতি চলবে। ভুল হলে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, SIR চলাকালীন বহু জেলায় দেখা যাচ্ছে নকল বা জাল ভোটার, মৃত ব্যক্তির নাম তালিকায় রয়ে যাওয়া, অন্যত্র স্থানান্তরিত ভোটারদের তথ্য আপডেট না হওয়া, এরকম ত্রুটি বাড়ছে।
CEC স্পষ্ট জানান, BLO–রা যখন ফর্ম যাচাই করে স্বাক্ষর করছেন, তখন দায়বদ্ধতাও তাঁদেরই। কোনও অনিয়ম প্রমাণিত হলে কেবল BLO নয়, অনুমোদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বছর ভোটার তালিকার ছবি যাচাইয়ের জন্য কমিশন একটি নতুন স্ক্যানিং অ্যাপ চালু করেছে। এই অ্যাপ ছবি নকল কি না, পরিবর্তিত কি না, অস্পষ্ট কি না তা শনাক্ত করতে সক্ষম। CEC নির্দেশ দিয়েছেন, ছবি পরিষ্কার না হলে BLO–রা বাড়িতে ফের যাবে, সময়সীমা শেষ হলেও কাজ থামবে না। অর্থাৎ ৯ ডিসেম্বর সময়সীমার পরেও প্রয়োজনে BLO–দের পুনরায় যাচাই করতে হবে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের SIR প্রক্রিয়া সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে সিনিয়র ডেপুটি ইলেকশন কমিশনার জ্ঞানেশ ভরতি-র নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল রাজ্যে আসছে। এই প্রতিনিধিদল উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার ERO–দের সঙ্গে পৃথক বৈঠক, ভোটার তালিকা সংশোধনের অগ্রগতি মূল্যায়ন, DEO ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বিস্তারিত রিভিউ এই সব কাজ করবে।
কমিশনের মতে, রাজ্যের ভোটার তালিকা যাতে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা এবং নির্ভুলতার সঙ্গে তৈরি হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতেই এই সফর। অন্যদিকে, শনিবার রাজ্যের একাধিক জেলায় BLO–রা বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ অতিরিক্ত কাজের চাপ, গভীর রাতে নির্দেশ পাঠানো, নতুন অ্যাপ ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না দেওয়া, হঠাৎ কাজের ডেডলাইন বাড়ানো, একাধিক প্রশিক্ষণ ও বৈঠকে অযথা চাপ সৃষ্টি করা।
অনেক BLO জানান, ডেটা এন্ট্রি এবং মাঠপর্যায়ের কাজ সমান্তরালভাবে করতে গিয়ে তাঁদের ওপর অত্যধিক মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। এর আগেই অন্তত ৮ জন BLO–কে শোকজ করা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, তাঁরা ফর্ম বাড়ি বাড়ি না দিয়ে ক্লাব, দোকানঘর, অথবা উন্মুক্ত স্থানে ফর্ম তুলে দিয়েছেন। যা নির্বাচন কমিশনের নিয়মের সরাসরি বিরোধী।
নির্দেশ অনুযায়ী, প্রত্যেক BLO–কে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম হাতে তুলে দিতে হবে। এটাই বাধ্যতামূলক নিয়ম। তবু একাধিক জেলায় এই নিয়ম পালিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ জমছে।


