মিলন পণ্ডা, ভূপতিনগর: সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় প্রতিহিংসা। আর সেই রোষেই এক যুবতীর ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল নদীয়ার এক যুবকের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ব্ল্যাকমেলের অভিযোগও রয়েছে। ভূপতিনগর থানার পুলিশের তৎপরতায় অবশেষে গ্রেফতার (Youth Arrest) করা হয়েছে অভিযুক্ত যুবক ধীর্তি মণ্ডলকে। বর্তমানে অভিযুক্ত ৭ দিনের জেল হেফাজতে রয়েছে।
জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ধীর্তি মণ্ডল নদীয়া জেলার কালিয়াগঞ্জ থানার উত্তর হাজরাপোতা এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ফেসবুকে ভূপতিনগর মাদাখালি এলাকার এক যুবতীর সঙ্গে পরিচয় হয় ধীর্তির। তখন ওই তরুণী একজন নার্সিং ছাত্রী ছিলেন। ধীরে ধীরে আলাপ গড়ায় প্রেমে। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে সেই সম্পর্কে ফাটল ধরে।
যুবতীর অভিযোগ, তিনি সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ধীর্তি কিছুতেই মানতে চায়নি। এরপর থেকেই শুরু হয় হেনস্থা ও মানসিক নির্যাতন। ফোনে, মেসেজে, সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ভাবে চাপ দিতে শুরু করে ধীর্তি। অভিযোগ, মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেল করতে ফেসবুকে ওয়াল ও মেসেঞ্জারে তার আপত্তিকর ছবি ভাইরাল করে দেয় সে। শুধু তাই নয়, অন্য নাম ব্যবহার করে একাধিক ভুয়ো প্রোফাইল খুলে সেখানেও আপত্তিকর ছবি পোস্ট করে বলে অভিযোগ।
অভিযোগকারিণী যুবতী জানান, “আমি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ধীর্তি মানসিকভাবে আমাকে এমনভাবে নির্যাতন করত, যে একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম। এমনকী বলেছিল, আমার কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছি, সেটা ফেরত দিতে হবে নয়তো সে আরও কিছু করে দেবে।”
এই সমস্ত ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে ২০২৫ সালের ৬ জুন ভূপতিনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন যুবতী। তদন্তে নেমে পুলিশ বুধবার নদীয়ার পলাশি এলাকা থেকে অভিযুক্ত ধীর্তি মণ্ডলকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার কাঁথি মহকুমা আদালতে পেশ করলে বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে ৭ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
ভূপতিনগর থানার এক পুলিশ আধিকারিক জানান, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছিলাম। ধীর্তিকে পলাশি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাটির সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।” ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তের বাবা জানান, “আমি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।”
এই ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ার নিরাপত্তা, নারীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আইটি অ্যাক্ট এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। গোটা ঘটনার নেপথ্যে কোনও চক্র রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী অফিসাররা।