Thakurnagar: ছোটো বোনের জয়েই কী নিজের ‘সর্বনাশ’ দেখছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু?

মতুয়া (Thakurnagar) অধ্যুষিত বাগদার উপনির্বাচনে তারুণ্যের জয়জয়কার। বিজেপির মতুয়াগড় (Thakurnagar) ছারখার করে দেশের সর্বকনিষ্ঠ বিধায়কের শিরোপা এখন মধুপর্ণার দখলে। কিন্তু শুধুই কি বিধায়কের পদ? নাকি…

মতুয়া (Thakurnagar) অধ্যুষিত বাগদার উপনির্বাচনে তারুণ্যের জয়জয়কার। বিজেপির মতুয়াগড় (Thakurnagar) ছারখার করে দেশের সর্বকনিষ্ঠ বিধায়কের শিরোপা এখন মধুপর্ণার দখলে। কিন্তু শুধুই কি বিধায়কের পদ? নাকি আরও অন্য কিছু দখলে আসতে চলেছে মধুপর্ণা তথা তাঁর মা মমতাবালা ঠাকুরের? ঠাকুরনগরের (Thakurnagar) ঠাকুরবাড়িতে কিন্তু ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক অঙ্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। যাতে আপাতত দুই গোলে এগিয়ে রয়েছে টিম মমতাবালা।

লোকসভা ভোটের আগেই বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরের বড় বৌমা মমতাবালাকে রাজ্যসভার সদস্য করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেকেই মনে করেছিলেন স্থানীয় রাজনীতিতে ঠাকুরবাড়ির গণ্ডি ছেড়ে বেরোতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে ঠাকুরবাড়ির মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্র অনেকটাই ঢলে পড়লে পড়েছিল শান্তনু ঠাকুরের দিকে। এমনকি বনগাঁ লোকসভাতে আবারও দ্বিতীয়বারের জন্য সাংসদ এবং প্রতিমন্ত্রী হয়ে ঠাকুরবাড়ির রাশ প্রায় নিজের কবজাতেই নিয়ে ফেলেছিলেন শান্তনু। কিন্তু ছোট বোন যে এইভাবেই পাল্টা টক্কর দেবে তা বোধ হয় তিনি নিজেও ভাবেননি।

   

জিতেই হারের কারণ ফাঁস রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণীর! মমতা-অভিষেকের কৃতিত্ব নিয়েই সন্দেহ?

লোকসভা ভোটের আবহে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে মেলা চলাকালীনই প্রবল ঝামেলার সূত্রপাত হয়। মমতাবালা ঠাকুরকে তাঁর দীর্ঘদিনের থাকার ঘর থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের তীর শান্তনুর দিকে। আরও অভিযোগ যে, প্রণামির বাক্সে জমা হওয়া বিপুল অঙ্কের টাকা দখলের জন্যই এত সমস্ত ষড়যন্ত্র। যদিও হেরিটেজের দোহাই দিয়ে শান্তনুর গাজোয়ারীই চলেছিল সে সময়। সেই সময়ই গোটা ঘটনার প্রতিবাদে অনশনে বসেন মমতা বালা ঠাকুরের ছোটো মেয়ে মধুপর্ণা।

অনশন চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়লেও রাজনীতির লাইম লাইটে আসতে তাঁর খুব একটা সময় লাগেনি। উপনির্বাচনে জয়ের পরপরই শান্তনুর দখল করে তালা লাগিয়ে দেওয়া ঘরের পুনরায় দখল নিলেন মা মেয়ে। শান্তনু ঠাকুরের লাগিয়ে দেওয়া সেই তালা ভেঙেই নিজেদের পুরোনো ঘরে প্রবেশ করলেন তাঁরা। কোথাও গিয়ে যা আরও রক্তচাপ বাড়াবে শান্তনুর এমনটাই মনে করছেন অনেকে।

মধুপর্ণার অনশনের ফলও মিলেছে হাতে নাতে। যেখানে রানাঘাট দক্ষিণ বা রায়গঞ্জের মত ক্ষেত্রে হেরে যাওয়া প্রার্থীর উপরেই ভরসা রেখেছিল তৃণমূল। কিন্তু বাগদার ক্ষেত্রে প্রাক্তন বিধায়ক তথা লোকসভায় হেরে যাওয়া বিশ্বজিৎ দাসকে সরিয়ে মধুপর্ণাকে প্রার্থী করে তৃণমূল কংগ্রেস। মতুয়া অধ্যুষিত বাগদাতে তারুণ্য এবং ঠাকুরবাড়ির আবেগ এই দুই অঙ্ককে বাজি করে লড়াইয়ে নেমেছিল তৃণমূল। অঙ্ক যে খুব একটা ভুল ছিল না তার প্রমাণ উপ-নির্বাচনের ফলেই পাওয়া গিয়েছে। সেই অর্থে কোন স্টার ক্যাম্পেনার না থাকা সত্ত্বেও, শুধুমাত্র এক ঝাঁক তরুণ মুখকে প্রচারে সঙ্গী করে ঝড় তুলেছিলেন মধুপর্ণা।

কিন্তু এবার সেই ঝড়ই কি ছারখার করতে চলেছে কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকে। ঠাকুরবাড়ির বিবাদমান দুই গোষ্ঠীর একপক্ষে রইলেন একজন মাত্র কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী কিন্তু তাঁর প্রতিপক্ষ হিসাবে একদিকে রাজ্যসভার সাংসদ এবং অন্যদিকে বিধায়ক। ক্ষমতার অঙ্কে কিছুটা হলেও এই মুহূর্তে এগিয়ে রয়েছেন মমতা বালা এমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

তবে তরুণতুর্কী মধুপর্ণা অদূর ভবিষ্যতে তাঁর দাদাকে যে বড় রকমের টক্কর দিতে চলেছে সেটা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত সমস্ত পক্ষই। আগামী দিনে লোকসভাতেও কি মধুপর্ণাকেই মুখ করা হবে? যদি এরকম বার্তা এখন থেকেই তৃণমূলের হাইকম্যান্ড দিতে শুরু করেন, তাহলে ঠাকুরবাড়ির রাজনীতিতেও অন্য মোড় শুরু হতে পারে।

মুকুটে নতুন পালক, রানাঘাটে রেকর্ড গড়ে তৃণমূলের ‘নয়নের মণি’ এই অধিকারী

শিক্ষিতা সুবক্তা তরুণী, স্বয়ং বড়মার স্নেহধন্যা নাতনী আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও যে অনেকটা বাড়িয়ে ফেলবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। আপাতত দেশের সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ককে নিয়ে আশঙ্কার মেঘ যথেষ্ট ভাল রকম ঘনীভূত হয়েছে বিরোধী বিজেপি তথা শান্তনু শিবিরে। আগামী দিনের দাদা বোনের দ্বৈরথ কোন দিকে মোড় নেয় সেটাই দেখার বিষয়। তৃণমূলের মতুয়া রাজনীতিও এখন অনেকটাই নির্ভর করবে মধুপর্ণার আগামী দিনের রাজনৈতিক সাফল্যের উপর।