বাংলাদেশি শরণার্থীদের জমির অধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত যোগী সরকারের

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Government) একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাজ্যে বসবাসরত প্রায় ১০,০০০ বাংলাদেশি শরণার্থী পরিবারকে জমির আইনি মালিকানা অধিকার প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।…

Yogi Government big decision

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Government) একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাজ্যে বসবাসরত প্রায় ১০,০০০ বাংলাদেশি শরণার্থী পরিবারকে জমির আইনি মালিকানা অধিকার প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার এক উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা রাজ্যের পিলিভিট, লখিমপুর খেরি, বিজনোর এবং রামপুর জেলায় বসবাসকারী শরণার্থী পরিবারগুলির জন্য এক নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী এই পদক্ষেপকে “নৈতিক দায়িত্ব” এবং “ঐতিহাসিক পদক্ষেপ” হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, “এটি কেবল জমির মালিকানা হস্তান্তরের বিষয় নয়, বরং দশকের পর দশক ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাসকারী হাজার হাজার পরিবারের জীবনযুদ্ধের সম্মান জানানোর একটি সুযোগ।” এই উদ্যোগকে তিনি সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিকতা এবং জাতীয় দায়িত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।

   

প্রেক্ষাপট ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য

১৯৬০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় বসতি স্থাপন করেছিল হাজার হাজার পরিবার। এই পরিবারগুলি মূলত পিলিভিট, লখিমপুর খেরি, বিজনোর এবং রামপুরে বসতি গড়ে তুলেছিল। এই শরণার্থীদের বেশিরভাগই ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল।

তবে, দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের জমির মালিকানার আইনি অধিকার না থাকায় তাঁরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, যেমন পাসপোর্ট বা ব্যাঙ্ক ঋণের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথি পেতে অসুবিধা। যোগী সরকারের এই সিদ্ধান্ত এই পরিবারগুলির জন্য একটি নতুন জীবনের সূচনা করতে পারে।

আইনি চ্যালেঞ্জ ও সমাধানের পথ

যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে গভর্নমেন্ট গ্রান্টস অ্যাক্ট বাতিল হওয়ায় জমির মালিকানা প্রদানে আইনি জটিলতা দেখা দিয়েছে। তিনি কর্মকর্তাদের বর্তমান আইনি কাঠামোর মধ্যে বিকল্প পদ্ধতি খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে বিজনোর এবং রামপুরের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বসবাসকারী শরণার্থীদের জন্য জমির মালিকানা প্রদান একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, বনাঞ্চলের জমির মালিকানা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই সরকার এই পরিবারগুলিকে অন্যত্র পুনর্বাসনের বিকল্প বিবেচনা করছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ১৪২টি গ্রামে প্রায় ১০,০০০ পরিবার বসতি স্থাপন করলেও, বর্তমানে তাদের সংখ্যা আরও বেশি। এই পরিবারগুলিকে আসল শরণার্থী হিসেবে চিহ্নিত করা এবং তাঁদের জন্য উপযুক্ত জমি বরাদ্দ করা একটি জটিল প্রক্রিয়া।

পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তুলনা ও রাজনৈতিক বিতর্ক

এই সিদ্ধান্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২০১৯ সালের একটি অনুরূপ উদ্যোগের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে, যেখানে তিনি প্রায় ১২,০০০ শরণার্থী পরিবারকে জমির মালিকানা দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন। তবে, বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ সেই সময় অভিযোগ করেছিলেন যে মমতা সরকার এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করছে।

তিনি বলেছিলেন, “জমির মালিকানা নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। এটি আইনত অবৈধ।” এই প্রেক্ষাপটে, যোগী সরকারের সিদ্ধান্তকে বিজেপির নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC) প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে দেখা হচ্ছে, যা হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে, যোগী সরকারের এই উদ্যোগকে রাজনৈতিক মহলে একটি মানবিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসা করা হচ্ছে।

Advertisements

প্রবীণ নাগরিকদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধাএই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি, যোগী সরকার আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অধীনে ৭০ বছরের বেশি বয়সী শরণার্থীদের জন্য আয়ুষ্মান ভয় বন্দনা কার্ডের সুবিধা প্রদানের কথাও ভাবছে। এই কার্ডের মাধ্যমে প্রবীণ শরণার্থীরা বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। এটি তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

এই সিদ্ধান্ত উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এই পদক্ষেপের মাধ্যমে শরণার্থী সম্প্রদায়ের সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করছে, যা আগামী বিধানসভা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

তবে, বিরোধী দলগুলি এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলছে যে এটি রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্য করা হয়েছে। তারা অভিযোগ করছে, শরণার্থীদের মধ্যে “আসল” এবং “অনুপ্রবেশকারী” চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয়।

যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে উত্তর প্রদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশি শরণার্থীদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। দশকের পর দশক ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাসকারী এই পরিবারগুলি এখন আইনি মালিকানা অধিকার পেয়ে তাঁদের জীবনে স্থিতিশীলতা এবং মর্যাদা ফিরে পেতে পারেন।

খড়গপুরের জনজোয়ারে শুভেন্দুকে কিস্তিমাত দিলীপের

তবে, আইনি ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এই প্রক্রিয়া সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সরকারের জন্য একটি বড় পরীক্ষা হবে। এই পদক্ষেপ কীভাবে রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক গতিপ্রকৃতিকে প্রভাবিত করে, তা সময়ই বলবে।