বদলাচ্ছে গ্রাম বাংলার অর্থনীতি, মাশরুম চাষে ঝুঁকছেন নারীরা

মাশরুম (Mushroom Farming) এখন শুধুমাত্র একধরনের সবজি নয়, এটি একদিকে যেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর, তেমনই রাজ্যের বহু মহিলার আর্থিক স্বনির্ভরতার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। সরকার ও বিভিন্ন…

Women in Midnapore Achieve Economic Independence Through Mushroom Farming

মাশরুম (Mushroom Farming) এখন শুধুমাত্র একধরনের সবজি নয়, এটি একদিকে যেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর, তেমনই রাজ্যের বহু মহিলার আর্থিক স্বনির্ভরতার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের মাশরুম(Mushroom Farming) তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ইতিমধ্যেই জেলার প্রায় ছ’ থেকে সাত হাজার মহিলা এই প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের ছোট ব্যবসা শুরু করেছেন। প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই হল, মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা এবং তাঁদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলা।

প্রশিক্ষণে মহিলাদের শেখানো হচ্ছে কীভাবে ঘরে বসেই অল্প খরচে মাশরুম চাষ করা যায়। তুলনামূলকভাবে স্বল্প জায়গায়, কম পরিকাঠামো দিয়েই এই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। এজন্য বড় জমি কিংবা বিশাল মূলধনের প্রয়োজন নেই। মাশরুম চাষের জন্য মূলত ধানের খড়, পরিষ্কার জায়গা ও কিছু প্রয়োজনীয় উপকরণই যথেষ্ট। তাই গ্রামীণ মহিলাদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত উদ্যোগ হিসেবে উঠে এসেছে। বিশেষত যাঁরা গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের রাস্তা খুঁজছেন, তাঁদের কাছে এই প্রকল্প অত্যন্ত কার্যকর।

   

আজকের দিনে মাশরুমের (Mushroom Farming) বাজার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। কোনও আচার অনুষ্ঠান, বিয়ে বাড়ি কিংবা নামী হোটেল-রেস্তোরাঁ—সব জায়গাতেই নিরামিষ খাবারের তালিকায় মাশরুম অন্যতম উপকরণ হয়ে উঠেছে। মাশরুম দিয়ে তৈরি করা যায় নানা ধরনের পদ—চিলি মাশরুম, মাশরুম কষা, মাশরুম পোলাও, মাশরুম স্যুপ ইত্যাদি। শুধু স্বাদের দিক থেকেই নয়, মাশরুমের (Mushroom Farming) রয়েছে যথেষ্ট পুষ্টিগুণও। এতে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস প্রভৃতির পরিমাণ অনেক বেশি, অথচ চর্বি ও কোলেস্টেরল তুলনামূলকভাবে কম। ফলে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষও মাশরুমকে তাঁদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখছেন।

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে উৎপাদিত মাশরুম স্থানীয় বাজারেই বিক্রি হচ্ছে না, রাজ্যের বাইরেও এর রফতানি হচ্ছে। ফলে এই ব্যবসার প্রসার আরও বেশি করে ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনে রাজ্যে মাশরুমের চাহিদা আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। সেই কথা মাথায় রেখেই মহিলাদের প্রশিক্ষণের উপর এত জোর দেওয়া হচ্ছে।

প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মহিলাদের দেওয়া হচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণের সুবিধাও, যাতে তাঁরা সহজেই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। অনেকেই সেই ঋণ নিয়ে নিজস্ব উদ্যোগ গড়ে তুলেছেন। মাশরুম চাষ করে তাঁরা যেমন সংসারের চাহিদা মেটাচ্ছেন, তেমনই সঞ্চয়ও করতে পারছেন। এর ফলে গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে এই প্রকল্প।

Advertisements

অন্যদিকে, এই উদ্যোগ মহিলাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলেছে। আগে যাঁরা শুধুমাত্র গৃহিণী হিসেবে পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন, আজ তাঁরা উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন। নিজের হাতে উপার্জন করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগানো কিংবা নিজেদের স্বপ্ন পূরণ—সবকিছুই সম্ভব হচ্ছে মাশরুম চাষের মাধ্যমে।

গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নে এ ধরনের প্রকল্প নিঃসন্দেহে এক বড় পদক্ষেপ। কারণ এটি শুধু অর্থনৈতিক লাভের দিক থেকেই নয়, সামাজিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। মহিলারা যখন নিজের ব্যবসা নিজের হাতে নিয়ন্ত্রণ করছেন, তখন তাঁদের সমাজে মর্যাদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মাশরুম (Mushroom Farming) চাষের এই সাফল্য প্রমাণ করছে, সামান্য উদ্যোগ ও প্রশিক্ষণ কীভাবে হাজার হাজার মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। রাজ্যে মাশরুম উৎপাদনকে আরও বড় আকারে ছড়িয়ে দিতে হলে সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি বিপণনেরও সঠিক ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই মহিলাদের এই উদ্যোগ কেবল স্থানীয় নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সাফল্যের নজির গড়তে পারবে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, মাশরুম(Mushroom Farming) চাষ এখন শুধু একটি কৃষি উদ্যোগ নয়, বরং গ্রামীণ মহিলাদের স্বনির্ভরতার এক নতুন দিগন্ত। এই প্রকল্প তাঁদের হাতে এনে দিয়েছে নতুন আশার আলো এবং ভবিষ্যতের আরও অনেক সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে