মুর্শিদাবাদ (murshidabad) জেলার একটি গ্রামে বুধবার ২৬ মার্চ, একটি অপরিশোধিত বোমা বিস্ফোরণে একজন মহিলা এবং তাঁর নাতি গুরুতর আহত হয়েছেন। এই ঘটনা ঘটেছে জেলার সাগরপাড়া থানার অন্তর্গত খায়েরতলা গ্রামে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিস্ফোরণটি স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদ শেখের বাড়ির কাছে ঘটে, যখন ওই মহিলা এবং তাঁর নাতি বাড়ির কাছাকাছি দিয়ে যাচ্ছিলেন। এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
ঘটনার বিবরণ
আহত মহিলার নাম রাবেয়া বিবি (৫৫) এবং তাঁর নাতির নাম রাকিবুল শেখ (১২)। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাবেয়া বিবি তাঁর নাতিকে নিয়ে বাড়ির কাছের একটি মাঠে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি বিকট শব্দের সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী এবং ধ্বংসাবশেষ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। রাবেয়া এবং রাকিবুল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁদের শরীরে ধারালো ধাতব টুকরো ঢুকে যায় এবং রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁরা চিৎকার করতে থাকেন।
স্থানীয়রা তৎক্ষণাৎ তাঁদের উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাবেয়া বিবির হাত ও পায়ে গুরুতর ক্ষত হয়েছে এবং রাকিবুলের মুখ ও বুকে আঘাত লেগেছে। দুজনেরই অবস্থা গুরুতর, তবে তারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন এবং স্থিতিশীল। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তাঁদের শরীর থেকে ধাতব টুকরো বের করার জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
আরো দেখুন মুম্বাইতে ঐশ্বর্যর গাড়ির সঙ্গে বাসের দুর্ঘটনা, উদ্বিগ্ন ভক্তরা
পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই বিস্ফোরণের জন্য একটি অপরিশোধিত বোমা দায়ী। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ফরিদ শেখের বাড়ি থেকে উচ্চ শব্দ এবং ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। পুলিশ সন্দেহ করছে যে, ওই বাড়িতে বোমা তৈরির কাজ চলছিল এবং সম্ভবত দুর্ঘটনাবশত এই বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ বাড়িটি ঘিরে ফেলে এবং বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলকে ডাকা হয়। তদন্তকারীরা জানান, বাড়ির ভিতরে আরও কিছু অপরিশোধিত বোমা এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।
মুর্শিদাবাদ (murshidabad)জেলায় অপরিশোধিত বোমার ঘটনা
মুর্শিদাবাদ জেলায় অপরিশোধিত বোমার ঘটনা নতুন নয়। গত কয়েক বছরে এই জেলায় একাধিক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু এবং আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গত ডিসেম্বরে খায়েরতলা গ্রামে একটি বোমা বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হয়েছিলেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন যে, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপের জন্য এই ধরনের বোমা ব্যবহার করা হয়। এই ঘটনার পর বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা হয় নিজেরা এই ধরনের চরমপন্থায় জড়িত, নয়তো এমন উগ্রপন্থীদের আশ্রয় দিচ্ছেন যাদের কাছে বিস্ফোরক রয়েছে।”
পুলিশ ফরিদ শেখকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। তবে, তিনি দাবি করেছেন যে তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন এবং বোমাটি বাইরে থেকে কেউ ছুঁড়ে থাকতে পারে। পুলিশ এই দাবির সত্যতা যাচাই করছে। একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “আমরা এই ঘটনার পিছনে কী কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখছি। এটি দুর্ঘটনা, না ইচ্ছাকৃত হামলা, তা নিশ্চিত করতে তদন্ত চলছে।”
এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ
এই ঘটনায় এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রাবেয়ার প্রতিবেশী আব্দুল হক বলেন, “এই বোমার ঘটনা আমাদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। আমরা শান্তিতে বাঁচতে চাই, কিন্তু এখানে প্রতিনিয়ত ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়।” আরেক বাসিন্দা, সাবিনা খাতুন বলেন, “সরকারের উচিত এই ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ করা। আমাদের বাচ্চারা আর নিরাপদ নয়।”
বিশেষজ্ঞদের মতে
বিশেষজ্ঞদের মতে, মুর্শিদাবাদে অপরিশোধিত বোমার ব্যবহার রাজনৈতিক সহিংসতা এবং অপরাধের সঙ্গে জড়িত। একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, “এই ধরনের ঘটনা শুধু আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নয়, এটি সামাজিক অস্থিরতারও ইঙ্গিত দেয়। সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
এই ঘটনার পর জেলা প্রশাসন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ঘটনাস্থল পরীক্ষা করছে। জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, “আমরা এই ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা
সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে রাবেয়া এবং রাকিবুলের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন, আবার কেউ কেউ সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, “এই ধরনের ঘটনা বন্ধ না হলে আমরা কীভাবে নিরাপদে বাঁচব?”
এই বিস্ফোরণ মুর্শিদাবাদে (murshidabad) অবৈধ বোমা তৈরি এবং সহিংসতার একটি চলমান সমস্যাকে আবারও সামনে এনেছে। আগামী দিনে পুলিশের তদন্তে কী তথ্য বেরিয়ে আসে, তা দেখার জন্য এলাকাবাসী অপেক্ষায় রয়েছে। তবে, এই ঘটনা স্থানীয়দের মনে ভয় এবং অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলেছে।