স্নেহা ঘোষ, ডুয়ার্স: ডুয়ার্স মানেই প্রকৃতির মাধুর্য আর বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক উপস্থিতি। এমন দৃশ্যই ফের একবার চোখে পড়লো জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন মূর্তি নদীর ধারে। বুধবার বিকেলে হঠাৎ করেই একটি বুনো হাতি পানঝোরা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে উপস্থিত হয় মূর্তি নদীর পাড়ে। বন ও বন্যপ্রাণীপ্রেমীদের কাছে এই ঘটনা যেমন আনন্দের, তেমনই পর্যটকদের কাছে তা এক বিশেষ অভিজ্ঞতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ পানঝোরা জঙ্গল থেকে একটি পূর্ণবয়স্ক বুনো হাতি বেরিয়ে এসে মূর্তি নদীর পাড়ে জল খেতে আসে। একেবারে হোটেল ও রিসর্ট এলাকার খুব কাছাকাছি চলে আসে হাতিটি। সেই খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং ভিড় জমে যায় পর্যটক ও স্থানীয়দের। অনেকেই ক্যামেরা ও মোবাইল নিয়ে হাতির ছবি ও ভিডিও তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
এক পর্যটক জানিয়েছেন, “এই প্রথম ডুয়ার্সে এসে এত কাছ থেকে বুনো হাতি দেখলাম। স্বপ্নপূরণ হলো।”
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান মূর্তি বিটের বনকর্মীরা। তাঁরা পর্যটকদের নিরাপদ দূরত্বে থাকার পরামর্শ দেন ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখেন। বনকর্মীদের মতে, “এই সময় বৃষ্টির কারণে বন্যপ্রাণীরা প্রায়শই নদীতে জল খেতে বা জঙ্গলের প্রান্তে ঘোরাঘুরি করতে আসে। এটি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক আচরণ।”
হাতিটি কিছুক্ষণ নদীর পাড়ে ঘোরাঘুরি করে, তারপর নিজে থেকেই আবার জঙ্গলের দিকে ফিরে যায়। কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা দুর্ঘটনার খবর মেলেনি।
ডুয়ার্সের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হল বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি। জলদাপাড়া, গরুমারা, চাপরামারি, খুনিয়া, ও পানঝোরা অঞ্চলে মাঝেমধ্যেই হাতি, বাইসন, গন্ডার এমনকি চিতাবাঘ দেখা যায়। এই অঞ্চলে পর্যটন অনেকটাই নির্ভর করে এই প্রাকৃতিক দৃশ্য ও অভিজ্ঞতার উপর।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, “হাতি দেখা গেলে অনেক পর্যটক রোমাঞ্চের জন্য আবার আসেন। তবে সুরক্ষার বিষয়েও যেন গুরুত্ব দেওয়া হয়, এটাই দাবি।”
পরিবেশবিদদের মতে, জঙ্গল ও মানব বসতির মধ্যে দুরত্ব যত কমে আসছে, ততই এই ধরনের হঠাৎ উপস্থিতির ঘটনা বাড়বে। তবে এটি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নয়। মানুষ ও বন্যপ্রাণী একে অপরের অস্তিত্ব মেনে নিয়েই সহাবস্থান করতে পারলে ভবিষ্যতের জন্য তা হবে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।
বনদফতরের এক আধিকারিক বলেন, “জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় যারা থাকেন, তাঁদের নিয়মিত সচেতন করা হচ্ছে। পর্যটকদেরও জানানো হচ্ছে কীভাবে বন্যপ্রাণীকে বিরক্ত না করে তাদের কাছাকাছি থেকে উপভোগ করা যায়।”
মূর্তি নদীর ধারে বুনো হাতির উপস্থিতি ফের একবার প্রমাণ করল—ডুয়ার্স শুধুই একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি প্রকৃতি ও বন্যজীবনের নিখাদ মিলনের এক মধুর উপাখ্যান। তবে এর পাশাপাশি প্রয়োজন সচেতনতা, নিরাপত্তা এবং পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি। তাহলেই ডুয়ার্স থাকবে আগের মতোই সবুজ, রোমাঞ্চকর এবং প্রাণবন্ত।