১ বছরে ৬৫০ থেকে ৮০০, কেন বাড়ছে হাতির সংখ্যা?উদ্বিগ্ন বন দপ্তর

পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) বনাঞ্চলে গত কয়েক বছরে হাতির (Elephant) সংখ্যা (Population) ব্যাপকভাবে বেড়ে (Increased) যাওয়ায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে রাজ্যে…

Elephant Population in West Bengal

পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) বনাঞ্চলে গত কয়েক বছরে হাতির (Elephant) সংখ্যা (Population) ব্যাপকভাবে বেড়ে (Increased) যাওয়ায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে রাজ্যে হাতির সংখ্যা প্রায় ৮০০, যেখানে এই সংখ্যা ২০০–২৫০ থাকার কথা ছিল। ২০২৩ সালে রাজ্যের হাতির সংখ্যা ছিল ৬৫০ (650), কিন্তু মাত্র এক বছরে কেন (Why) তা ৮০০–এ (800) পৌঁছে গেল, সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য সরকার। হাতির সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনও একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

বনদপ্তরের (Forest Department) কর্তারা জানান, হাতির সংখ্যা বাড়লে বেশ কিছু নতুন সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো হাতির খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং জনবসতিতে ঢুকে পড়ার প্রবণতা। হাতির সংখ্যা বেড়ে গেলে তারা খাবারের খোঁজে গ্রামের দিকে চলে আসে, যার ফলে বনসংলগ্ন এলাকায় মানুষের সঙ্গে হাতির সংঘর্ষের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ছাড়া, হাতির সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চোরাশিকারিদের কর্মকাণ্ডও বাড়তে পারে, যা রাজ্যের বনাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

   

এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য রাজ্য সরকার উত্তরবঙ্গ এবং রাঢ়বঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা সম্প্রতি বিধানসভায় বলেছেন, “রাজ্যে ২০০–২৫০ হাতি থাকার কথা ছিল, কিন্তু বর্তমানে ৮০০ হাতি রয়েছে। হাতির খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে, যার ফলে তারা মানুষের বসবাসের এলাকা আক্রমণ করছে। এখন আমাদের কর্তব্য হলো, হাতি ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও সচেতনতা বাড়ানো।”

এছাড়াও, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের বনাঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বিষয়টির সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে আশার কথা হলো, হাতির সংখ্যা বৃদ্ধির পরেও রাজ্যে হাতির আক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৩ সালে হাতির আক্রমণে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল, কিন্তু ২০২৪ সালে তা কমে ১৩-এ দাঁড়িয়েছে। বনদপ্তরের কর্মীদের সচেতনতা প্রচারের কারণে এই অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা আরও জানিয়েছেন, “বনদপ্তর (Forest Department) ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে যাতে বনকাটা বন্ধ করা যায় এবং বনাঞ্চলের ব্যাপকতা বাড়ানো যায়। আমাদের চেষ্টার ফলস্বরূপ, গত বছর হাতির আক্রমণে মৃত্যুর হার কমেছে। কিন্তু হাতির আক্রমণ কমাতে আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের বনাঞ্চল আরও বৃদ্ধি পেলে হাতির খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা আরও ভালো হবে, ফলে মানুষ এবং হাতির মধ্যে সংঘর্ষের ঝুঁকি কমবে।”

তবে, হাতির সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বনাঞ্চল ও জনগণের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বৃদ্ধি পেতে পারে। বনদপ্তরের (Forest Department) কর্মকর্তারা সতর্ক করছেন, জনবসতিতে হাতির প্রবেশ যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা অনেক বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে, চাষিদের ফসল নষ্ট করা এবং গবাদি পশু মারা যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

রাজ্য সরকার এখন হাতি ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা জানিয়েছেন, “বনসংলগ্ন এলাকাগুলিতে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রচার চালানো হবে এবং স্থানীয় বিধায়কদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে যেন তারা আরও বেশি করে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেন।”

এছাড়াও, রাজ্য সরকার হাতির আক্রমণ ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে হাতির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রশাসন নিশ্চিত করতে চায়, হাতির হঠাৎ উপস্থিতি কিংবা কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে মোকাবেলা করা যাবে।

কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রক ইতিমধ্যেই রাজ্যের অবস্থা জানিয়ে একটি বিশেষ বৈঠক আয়োজন করেছে। এই বৈঠকে হাতির সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ এবং এর প্রভাব নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হবে। ইতিমধ্যে, পশ্চিমবঙ্গ বন দপ্তর জানিয়েছে যে তারা হাতির সংখ্যা ও গতিবিধি ট্র্যাক করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে। এ ছাড়া, বনাঞ্চল সংরক্ষণ এবং হাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বনদপ্তর ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে।

এখনকার মতো যদি হাতির সংখ্যা এমনভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তবে রাজ্য সরকারকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। সরকারকে এই সমস্যা মোকাবেলা করতে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষভাবে হাতির খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আরও গবেষণা এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়াও, রাজ্য সরকার এই বিষয়টির সমাধান করার জন্য বনাঞ্চল এবং হাতির জীবনধারা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করবে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে। আশা করা যায়, এই উদ্যোগগুলির মাধ্যমে রাজ্যে হাতির সংখ্যা বৃদ্ধি ও জনবসতিতে হাতির আক্রমণের সমস্যা যথাযথভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

এদিকে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজ্য সরকার যদি হাতি এবং বনাঞ্চল সংক্রান্ত সচেতনতা আরও বাড়ায়, তবে ভবিষ্যতে হাতির আক্রমণ ও সংঘর্ষের ঘটনা আরও কমবে এবং রাজ্যে বনসংরক্ষণ নিয়ে স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হবে।