অন্তর্ঘাতেই হার দেবাংশুর? তৃণমূলের রিপোর্টে জলঘোলা কোলাঘাটে!

ভোটের ফলাফলে তিনি (Tamluk Debangshu Bhattacharya) হেরেছেন। তবুও তমলুকের তৃণমূল সমর্থকদের কাছে তিনি যেন হেরেও জেতা বাজিগর। নিজের জীবনের প্রথম নির্বাচনে একা হাতে ঘুমিয়ে পড়া…

ভোটের ফলাফলে তিনি (Tamluk Debangshu Bhattacharya) হেরেছেন। তবুও তমলুকের তৃণমূল সমর্থকদের কাছে তিনি যেন হেরেও জেতা বাজিগর। নিজের জীবনের প্রথম নির্বাচনে একা হাতে ঘুমিয়ে পড়া সংগঠনকে দাঁড় করিয়েছিলেন দেবাংশু(Tamluk Debangshu Bhattacharya)। সেটা অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কাছেই তারিফ কুড়িয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আশা জাগিয়েও শেষমেষ আশাহতই হতে হয়েছে। প্রতিপক্ষ বিজেপির প্রার্থী প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলীই শেষমেষ জিতেছেন তমলুক থেকে।

কিন্তু হারের কারণ কি? শুরু হয়ে গিয়েছে বিস্তর কাদা ছোড়াছুড়ি! এরপর আভ্যন্তরীন ময়নাতদন্তে নেমেছে ঘাসফুল শিবির। এবার তৃণমূলের তরফে বিস্ফোরক অভিযোগ, টাকা দিয়ে ভোট করিয়েছে বিজেপি। যদিও ‘হারের পরে লজ্জায় পাগলের প্রলাপ’ বলে এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি নেতারা।

   

মদ মাংস বাতিল ঘোষণা উদয়নের! কোচবিহারে তৃণমূল হবে নিরামিশাষী?

প্রেস্টিজ ফাইটে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে ২৪-এর নির্বাচনে ভাল মার্জিনেই হেরেছে তৃণমূল। তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য(Tamluk Debangshu Bhattacharya) ৭৭,৭৩৩ ভোটে হেরেছেন বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে ৭ টি বিধানসভা রয়েছে, কিন্তু তার মধ্যে সবার নজর এখন কোলাঘাট বিধানসভয়। কারণ রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী এই কোলাঘাটেরই বিধায়ক ।

যদি ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের হিসেব দেখা হয়, বিজেপি পেয়েছিল ৮১,৫৫৩ ভোট। সেসময় তৃণমূলের দখলে ছিল ৯১,২১৩ টি ভোট। অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে এই আসনে জয়লাভ করে তৃণমূলের বিপ্লব রায়চৌধুরী। আর ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে যেন ম্যাজিকের মত হিসেব গিয়েছে উল্টে।

পকেট গড়ের মাঠ! হাইকম্যান্ডের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা প্রদেশ কংগ্রেসের

সদ্যসমাপ্ত লোকসভায় কোলাঘাট বিধানসভাতে তৃণমূল পেয়েছে ৮৮,৫২৮ ভোট । অন্যদিকে ৯১,২৪৯ ভোট পেয়ে বিজেপি প্রায় ৩০০০ ভোটে এগিয়ে ছিল এই বিধানসভা থেকে। রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী নিজের গড়ই রক্ষা করতে পারেননি। ক্ষুব্ধ স্থানীয় নেতাদের সোজাসাপ্টা দাবি, এই দায় নিতে হবে মন্ত্রীকেই। তমলুকে তৃণমূলের এই ভরাডুবি নিয়ে তমলুকের বিধায়ক কার্যালয় ইতিমধ্যে একটি পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে।

আর সেখানেই বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটে দেদার টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু টাকা ছড়ানো হলেও, টাকা নিয়ে ঘরশত্রু বিভীষণ হল কারা? সেই নিয়ে সন্দেহের চোরাস্রোত এখন জেলার ঘাসফুল শিবিরে। এমনকী মন্ত্রীত্বও যেতে পারে বিপ্লবের, এমন আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।

লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন রীতিমতো উদ্ভ্রান্তের মতো তমলুকের এপ্রান্ত ওপ্রান্ত ছুটে বেড়াতে দেখা গিয়েছিল প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলিকে ! এমনকি নির্বাচনপর্ব মেটার পরপরই একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল কে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় অভদ্র আচরণের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। তৃণমূলের অনেকেই সেই সময় বলেছিলেন যে সম্ভাব্য হারের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল এগুলো। কিন্তু ফল প্রকাশের দিন শেষ হাসি হাসলেন সেই অভিজিৎ গাঙ্গুলীই।

তৃণমূলের অনেক স্থানীয় নেতার মত মতে, লড়াইটা মোটেও সহজ ছিল না। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর একেবারে দুর্ভেদ্য গড় বলে পরিচিত তমলুক কেন্দ্র। সেখানে তাঁর নির্বাচিত প্রার্থীর জয়ই যে একপ্রকার অবশ্যম্ভাবী ছিল সেটা অনেকেই বলেছিলেন। সেই সঙ্গে ছিল তৃণমূলের স্থানীয় সংগঠনের দুর্বলতা।

তা সত্ত্বেও কলকাতা থেকে গিয়ে রীতিমত সংগঠনের ভোল পাল্টে দিয়েছিলেন দেবাংশু। একা হাতে রীতিমত ঘর থেকে বের করে এনেছিলেন বসে যাওয়া তৃণমূল কর্মীদের। তালা ঝুলিয়ে দেওয়া পার্টি অফিসের তালা ভেঙে খুলে দিয়েছিলেন দরজা। কিন্তু তবুও জয়ের দরজা তার জন্য খুললো না। আর তার কারণ হিসাবে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-মন্ত্রীদের অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনার দিকেই আঙ্গুল তুলছে এই রিপোর্ট।