বাংলার কর্ম সংস্থানের বেহাল দশার দায়ভার কার? প্রশ্ন তথাগতের

আবারও বিস্ফোরক তথাগত রায় (Tathagata)। বাংলায় তৃণমূল সরকারের শাসনকালে কর্মসংস্থান নেই কেন তার কারণ ব্যাখ্যা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন তিনি। তিনি বলেছেন,পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনকালে…

Tathagata on TMC

আবারও বিস্ফোরক তথাগত রায় (Tathagata)। বাংলায় তৃণমূল সরকারের শাসনকালে কর্মসংস্থান নেই কেন তার কারণ ব্যাখ্যা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন তিনি। তিনি বলেছেন,পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনকালে গত ১৪ বছরে ৬,৬৮৮টি কোম্পানি তাদের ব্যাবসা অন্য রাজ্যে স্থানান্তরিত করেছে। এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে, এবং এই ঘটনাকে রাজ্যের অর্থনৈতিক পতনের একটি গুরুতর চিত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা তথাগত রায় এই তথ্য উল্লেখ করে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের দুর্নীতি, নীতিগত অস্থিরতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাবের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি এই ঘটনাকে “ব্যবসার গণপলায়ন” হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, “একসময় বাংলা ছিল উদ্যোগের কেন্দ্রস্থল, কিন্তু দুর্ব্যবস্থাপনা এবং নীতির অস্থিরতার কারণে কোম্পানিগুলি রাজ্য ছেড়ে পালিয়েছে।”

   

কোম্পানির পলায়ন: তথ্য ও পরিসংখ্যান

তথাগতের তথ্য অনুযায়ী ২০১১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে স্থানান্তরিত ৬,৬৮৮টি কোম্পানির মধ্যে ১১০টি ছিল স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত। বছরভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ সালে ৮৬৯টি, ২০১৬-১৭ সালে ৯১৮টি এবং ২০১৭-১৮ সালে সর্বাধিক ১,০২৭টি কোম্পানি রাজ্য ছেড়েছে।

এই কোম্পানিগুলি মহারাষ্ট্র (১,৩০৮টি), দিল্লি (১,২৯৭টি), উত্তর প্রদেশ (৮৭৯টি), ছত্তিশগড় (৫১১টি), গুজরাট (৪২৩টি), এবং রাজস্থান (৩৩৩টি) সহ অন্যান্য রাজ্য যেমন আসাম, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু এবং তেলেঙ্গানায় স্থানান্তরিত হয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রভাব

এই বিপুল সংখ্যক কোম্পানির পলায়ন শুধুমাত্র একটি সংখ্যা নয়, এটি রাজ্যের অর্থনীতির জন্য গভীর ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়। এই স্থানান্তরের ফলে হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে এবং রাজ্যের শিল্প খাতে সংকট গভীরতর হয়েছে। তথাগত রায় দাবি করেছেন, “এই পলায়ন কর্মসংস্থানের ক্ষতি এবং অর্থনৈতিক পতনের প্রতিনিধিত্ব করে।” তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “এই অর্থনৈতিক অভিবাসনের জন্য কে দায়ী?”

তৃণমূলের শাসনের সমালোচনা

বিজেপি নেতা তথাগত রায় তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি, নীতিগত অস্থিরতা এবং শিল্পবান্ধব পরিবেশের অভাবকে এই পলায়নের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ একসময় শিল্পের কেন্দ্র ছিল, কিন্তু তৃণমূলের শাসনকালে দুর্ব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির কারণে এই খাত ধ্বংস হয়ে গেছে।”

Advertisements

এই তথ্য তুলে ধরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে “মাফিয়ারাজ” এবং “নীতিগত পক্ষাঘাত” এর অভিযোগ করা হয়েছে। তারা দাবি করেছে যে তৃণমূলের শাসনে বাংলা শিল্পের পরিবর্তে অর্থনৈতিক অবক্ষয়ের দিকে এগিয়েছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

তৃণমূল কংগ্রেস এখনও এই অভিযোগের জবাবে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে, অতীতে তৃণমূল নেতারা দাবি করেছেন যে তারা রাজ্যে শিল্পায়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন ‘বাংলা ব্যবসা সম্মেলন’ এবং শিল্পবান্ধব নীতি। কিন্তু ৬,৬৮৮ কোম্পানির স্থানান্তর এই দাবির বিপরীতে একটি কঠোর বাস্তবতা উপস্থাপন করছে। বিজেপি নেতারা এই তথ্যকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে।

৫২ লক্ষ ভোটার বাদ, ১ আগস্ট আসছে খসড়া তালিকা

বাংলার অর্থনীতির ভবিষ্যৎ

পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক পতনের এই তথ্য রাজ্যের শিল্প খাতের জন্য একটি সতর্কবার্তা। মহারাষ্ট্র, দিল্লি, উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যগুলি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে, যেখানে বাংলা পিছিয়ে পড়ছে। এই কোম্পানিগুলির পলায়ন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং রাজ্যের যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়। তথাগত রায়ের মতে, “এটি শুধু সংখ্যা নয়, এটি হারানো স্বপ্ন এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার ক্ষতি।”

৬,৬৮৮ কোম্পানির পশ্চিমবঙ্গ ত্যাগ রাজ্যের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে। তৃণমূল সরকারের শাসনকালে শিল্পের এই গণপলায়ন দুর্ব্যবস্থাপনা এবং নীতিগত ব্যর্থতার প্রতিফলন। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য স্বচ্ছ নীতি, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং শিল্পবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। বাংলার মানুষ এখন প্রশ্ন তুলছে—এই অর্থনৈতিক সংকটের জন্য কে দায়ী? এই প্রশ্নের উত্তরই নির্ধারণ করবে রাজ্যের ভবিষ্যৎ।