পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি (BJP) সংগঠনে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে দুই জেলার মধ্যে সদস্য সংগ্রহের (Membership Collection) প্রতিযোগিতা (Competition)। দক্ষিণ দিনাজপুর এবং নদিয়া দক্ষিণ জেলার মধ্যে চলমান এই লড়াই দলের মধ্যে এক অনন্য উত্তেজনা তৈরি করেছে। যেখানে একদিকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা নিজেদের সংগঠন শক্তিশালী করে প্রথম স্থানে পৌঁছেছিল, অন্যদিকে নদিয়া দক্ষিণ জেলা তাদের পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
এই দুই জেলার সদস্য সংগ্রহের লড়াই শুধু দলের মধ্যে খেলা করছে না, বরং তা রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। গত কয়েক মাস ধরে এই দুই জেলার মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা চলছিল এবং প্রতিটি জেলা তাদের নিজেদের দাপট প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া ছিল।
দক্ষিণ দিনাজপুর: শুরুতেই প্রথম স্থানে, কিন্তু চাপ বাড়ছে
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা, যা বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত, ছিল শুরু থেকেই সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এক অনন্য প্রতিযোগী। দলের সাংসদ এবং বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এর নেতৃত্বে জেলা সংগঠন দ্রুত গতিতে সদস্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে। জেলার কর্মীরা এবং নেতৃত্ব একযোগে মাঠে নামেন এবং ১ লক্ষেরও বেশি সদস্য সংগ্রহ করে রাজ্যের শীর্ষস্থান দখল করে।
এ সময়, সুকান্ত মজুমদারও জেলা নেতৃত্ব এবং কর্মীদের সমর্থন জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন, “এটি আমাদের দলীয় কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। আমরা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাকে সদস্য সংগ্রহে রাজ্যের প্রথম স্থান অর্জন করাতে গর্বিত।” সুকান্ত মজুমদারের এই মন্তব্য দলীয় কর্মীদের আরও উৎসাহিত করে এবং তাদের সাফল্যের দিকে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা, যেখানে দলটি ভালো সংগঠন এবং গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে শীর্ষস্থান দখল করেছিল, তারা মনে করেছিল তাদের জয়লাভ নিশ্চিত। কিন্তু, প্রতিযোগিতা যে এতটা কঠিন হতে পারে, তা হয়তো কেউ ভাবেনি। নদিয়া দক্ষিণ জেলার উত্থান নতুন একটা মাত্রা যোগ করেছে।
নদিয়া দক্ষিণ: হঠাৎ পরিবর্তন, দক্ষতা এবং সংগঠনের সাফল্য
রবিবার রাতের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নদিয়া দক্ষিণ জেলা তাদের সদস্য সংগ্রহে সাফল্য অর্জন করে ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৮৭০ জন সদস্য সংগ্রহ করেছে, যা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা থেকে কিছুটা বেশি। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৫৩৭। অর্থাৎ, মাত্র ১০২ জনের ব্যবধানে নদিয়া দক্ষিণ জেলা শীর্ষে উঠে এসেছে। এই ফলাফল রাজনৈতিক মহলে চমক সৃষ্টি করেছে।
নদিয়া দক্ষিণ জেলার সদস্য সংগ্রহের সাফল্যের পেছনে ছিল তাদের দক্ষ সংগঠন এবং মাঠে কাজ করা দলের কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টা। রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই জেলা দলীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এবং এখানে বিজেপি দলটি শক্ত অবস্থানে ছিল। নদিয়া দক্ষিণের নেতা-কর্মীরা বাড়তি উদ্যম নিয়ে কাজ করেছেন এবং খুব দ্রুত সদস্য সংগ্রহের কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
দলের সংগঠনের শক্তি এবং কর্মীদের নিষ্ঠা যে সঠিক পথে ছিল, তা প্রমাণিত হয়েছে। নদিয়া দক্ষিণ জেলার সদস্য সংগ্রহে এই উত্থান দলের মধ্যে আরও উৎসাহ এবং প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেছে, যা একদিকে দলের শক্তি বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
দলীয় মন্তব্য: প্রতিযোগিতা ও শৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ
এই মুহূর্তে, যখন দলের সদস্য সংগ্রহের ফলাফল নিয়ে আলোচনা চলছে, বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, “দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা আগে প্রথম স্থানে ছিল, কিন্তু এখন নদিয়া দক্ষিণ জেলা তাদের পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে। এটি এক ধরনের সুস্থ প্রতিযোগিতা, কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলি প্রকাশ্যে আনা ঠিক নয়।”
শমীক ভট্টাচার্য আরও বলেন, “দলের সদস্য সংগ্রহের কাজ পুরোপুরি দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় হওয়া উচিত। কোথা থেকে কত সদস্য সংগ্রহ হচ্ছে তা প্রকাশ্যে আসা দলের মধ্যে বিভ্রান্তি এবং বিচ্যুতি সৃষ্টি করতে পারে।” তাঁর এই বক্তব্য দলের শৃঙ্খলা এবং অভ্যন্তরীণ ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরে। দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকলেও তা যেন দলের মূল উদ্দেশ্য এবং শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলে, সেকথা শমীক ভট্টাচার্য মনে করিয়ে দিয়েছেন।
বিজেপির ভবিষ্যত: সদস্য সংগ্রহের গুরুত্ব
এই ধরনের প্রতিযোগিতার পিছনে দলের আসন্ন ভবিষ্যতের প্রস্তুতি রয়েছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে, বিজেপির জন্য সদস্য সংগ্রহ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি দলের সাংগঠনিক শক্তি এবং নির্বাচনী প্রস্তুতিকে আরও তীব্র করছে। প্রতিটি জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের জন্য এই প্রক্রিয়া বড় ধরনের পরীক্ষা, কারণ সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য মাঠে কর্মী ও নেতাদের মধ্যে ঐক্য এবং কার্যকরী কর্মপরিকল্পনা খুব জরুরি।
বিজেপির সদস্য সংগ্রহে এই তীব্র প্রতিযোগিতা দলের মধ্যে নতুন উৎসাহ এনে দিয়েছে। জেলা ভিত্তিক সংগঠন এবং মাঠের কর্মীদের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, যা আগামী নির্বাচনে দলের অগ্রগতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দক্ষিণ দিনাজপুর এবং নদিয়া দক্ষিণ জেলা বিজেপির মধ্যে চলা সদস্য সংগ্রহের লড়াই রাজনৈতিক ক্ষেত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে, দুটি জেলা দলের শক্তি এবং ঐক্য প্রকাশ করছে, অন্যদিকে, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দলের মধ্যে সুষ্ঠু এবং সুস্থ প্রতিযোগিতা বজায় রাখা জরুরি।
দলীয় শৃঙ্খলা এবং কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় বজায় রেখে সদস্য সংগ্রহের এই প্রক্রিয়া দলীয় নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রতিযোগিতা দলের ঐক্য এবং নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির জন্য অগ্রগতির পথ সুগম করবে।