দীপাবলির বঙ্গে সাড়ে আট হাজার কোটির বাজি বিক্রি

কলকাতা: দীপাবলি ও কালীপুজোকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে বাজি বিক্রির (Diwali fireworks market) হর্ষের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সর্বভারতীয় বাজি নির্মাতা ও বিক্রেতা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই…

West Bengal is poised for record Diwali fireworks sales

কলকাতা: দীপাবলি ও কালীপুজোকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে বাজি বিক্রির (Diwali fireworks market) হর্ষের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সর্বভারতীয় বাজি নির্মাতা ও বিক্রেতা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই বছরের বাজি বিক্রি সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে চলেছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি।

রাজ্যের ৭২টি “বাজি বাজারে” এই বছরে লক্ষাধিক ক্রেতা ভিড় জমিয়েছে, যা প্রতি বছর ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়। রাজ্যের প্রধান বাজি বিক্রেতাদের একাংশ বলছেন, এই প্রবণতা বজায় থাকলে বাজির বাজারে প্রচুর মুনাফা আসতে পারে। কলকাতা, হাওড়া, বর্ধমান, আসানসোল, জলপাইগুড়ি, মালদা, এবং মেদিনীপুরের বাজারে ক্রেতাদের এই বিপুল ভিড় দেখা গেছে।

   

পরিবেশবান্ধব বাজির চাহিদা বৃদ্ধি
রাজ্য সরকার পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্যোগ হিসাবে “গ্রিন বাজি” বা পরিবেশবান্ধব বাজির উপর গুরুত্ব দিয়েছে। পরিবেশবান্ধব বাজির চাহিদা মেটাতে ২০০ জনকে গ্রিন বাজি তৈরি শিখিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, এবং আরও ১,০০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রশিক্ষণের ফলে পরিবেশবান্ধব বাজির প্রচলন বাড়বে বলে আশা করছেন সংস্থা।

বাজির নিরাপত্তা ব্যবস্থা
পরিবেশ ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকার বিক্রি না হওয়া বাজিগুলির জন্য আলাদা জায়গা বরাদ্দ করেছে। প্রতিটি জেলায় স্থানীয় বাজারে অবিক্রীত বাজিগুলি সংরক্ষণ করতে একটি নির্দিষ্ট এলাকা ঠিক করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে মানদণ্ড অনুযায়ী বাজি রাখা হবে।

“বাজি বাজারের ক্রেতাদের মধ্যে তরুণ প্রজন্মের সংখ্যাই বেশি,” জানালেন এক বিক্রেতা। তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গ্রিন বাজির গুরুত্ব বুঝে তরুণরাও সচেতনভাবে পরিবেশবান্ধব বাজি কিনতে আগ্রহী হয়েছে। তবে গ্রিন বাজির মুল্য এখনও সাধারণ বাজির তুলনায় একটু বেশি, তাই সব ক্রেতাই তা কিনতে সক্ষম হচ্ছে না।”

বাজির চাহিদা এবং অর্থনীতির প্রভাব
দীপাবলির সময় বাজির বিক্রি রাজ্যের অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলে। পশ্চিমবঙ্গের বাজির বাজারের মোট মূল্য সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এক বিক্রেতার মতে, “বাজি বিক্রির মাধ্যমে লক্ষাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। এবছর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে অনেকেরই আয় ভালো হয়েছে।”

বাজি বাজারে প্রশাসনের কড়া নজরদারি
বাজির ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য প্রশাসন কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। সব বিক্রেতাদের লাইসেন্স নিশ্চিত করা হয়েছে, এবং বাজি বাজারগুলিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী সতর্ক রয়েছে।

কিন্তু এসবের মাঝেও বাজির ব্যবহার নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে। চিকিৎসক ও পরিবেশবিদরা বলছেন, বাজি ব্যবহারের ফলে বায়ুদূষণের মাত্রা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়, এবং এর ফলে শিশু ও বয়স্করা বেশ সমস্যার সম্মুখীন হন। তাঁরা বাজির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার পক্ষে সওয়াল করছেন।

পরিবেশ সংরক্ষণ এবং উৎসবের আনন্দ বজায় রেখে সঠিক দিকনির্দেশনা এবং প্রশাসনিক তত্ত্বাবধান বজায় রেখে এই বছরের বাজি বিক্রি এক নতুন দিশা দেখাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।