শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে এক গৃহবধূর রহস্যমৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সোমবার সকালে মোহাড় এলাকায় একটি খালের ধারে উদ্ধার হয় এক মহিলার নিথর দেহ। ঘটনাটি প্রথমে রহস্যজনক হলেও পরে জোরালো হয় খুনের তত্ত্ব। তদন্তে নেমে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এক যুবককে, যিনি মৃত মহিলার দূরসম্পর্কের জামাইবাবু। সবং থানার পুলিশের দাবি, এই খুনের পেছনে রয়েছে একটি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক (Extramarital Affair) ও তা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা।
মৃতার স্বামী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন যে, তাঁর স্ত্রীকে একটি যুবক ফোন করে দেখা করতে ডেকেছিল রবিবার সন্ধ্যায়। এরপরই তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। সোমবার সকালে তাঁর দেহ উদ্ধার হয় খালের পাশ থেকে। মৃতার দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল, যা দেখে পুলিশের অনুমান, তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মৃত গৃহবধূর সঙ্গে তাঁর জামাইবাবুর দীর্ঘদিনের একটি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। একসময় ওই গৃহবধূ তাঁর ঘর ছেড়ে চলে যান। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি ফের স্বামী ও মেয়ের কাছে ফিরে আসেন এবং সংসার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। স্বামীও সেই সম্পর্ক মেনে নেন। তবে অভিযুক্ত যুবক সেই প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারেননি।
পুলিশের সন্দেহ, এই অপমানের প্রতিশোধ নিতেই ওই যুবক তাঁকে ফোন করে দেখা করতে বলেন। দেখা করার অজুহাতে গিয়ে খুন করা হয় গৃহবধূকে। টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করা হয়। যদিও অভিযুক্ত সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
মঙ্গলবার মেদিনীপুর জেলা আদালতে অভিযুক্তকে তোলা হলে আদালত তাকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। পুলিশ জানায়, এই সময়ের মধ্যেই তারা ঘটনার মোটিভ এবং অন্যান্য তথ্য জানার চেষ্টা করবে।
এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি খুন নয়, বরং আমাদের সমাজে সম্পর্কের জটিলতা, প্রত্যাখ্যানের অসহিষ্ণুতা এবং নারীদের নিরাপত্তা ঘিরে এক গভীর প্রশ্ন তুলে দেয়। একজন নারী যদি নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসে নিজের পরিবারে ফিরে আসতে চান, তা কি তাঁর অধিকার নয়? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরের সাধারণ মানুষের মধ্যে।
সবংয়ের এই ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে। তবে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ একপ্রকার নিশ্চিত, এটি একটি পরিকল্পিত খুন। মৃত্যুর আগে ওই গৃহবধূ নতুন করে জীবন শুরু করতে চেয়েছিলেন, স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে চেয়েছিলেন। সেই স্বপ্নের মূল্য তাঁকে জীবন দিয়ে দিতে হয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার বিচার যেন দ্রুত হয়, এমনটাই দাবি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।