পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকায় বড় অসঙ্গতি, SIR-এর আগে ম্যাপিং সম্পন্ন

SIR 2025 Election Commission

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার যাচাই প্রক্রিয়ায় নতুন উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছে। ২০০২ এবং ২০২৫ সালের ভোটার তালিকা মিলানো বা “ম্যাপিং” প্রক্রিয়া রাজ্য জুড়ে প্রায় শেষ পর্যায়ে, তবে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়িতে বন্যা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশগত পরিস্থিতির কারণে কিছুদিন বিলম্ব হয়েছে। নির্বাচনী সূত্রের খবর, আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার কথা।

Advertisements

নির্বাচন কমিশন (ECI) এই বিশেষ যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটার তালিকাকে আরও স্বচ্ছ, নির্ভুল ও ভুয়া এন্ট্রি মুক্ত করার চেষ্টা করছে। ভোটার তালিকার ম্যাপিং মূলত ডিজিটালভাবে ২০২৫ সালের বর্তমান তালিকাকে ২০০২ সালের পুরনো তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে করা হয়। এটি নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ভোটার তালিকার মিল ৫০–৫৫ শতাংশ

রাজ্যজুড়ে প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, গড়ে ভোটার তালিকার মিল ৫০–৫৫ শতাংশ। তবে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পরিস্থিতি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। এখানে মিল মাত্র ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ, এই সীমান্তবর্তী জেলায় অর্ধেকের বেশি ভোটার নতুন। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞরা এটিকে “অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ নতুন ভোটারের হার” হিসেবে উল্লেখ করছেন।

পশ্চিম বর্ধমান জেলা আরও চিন্তার কারণ। এখানে মিলের হার ৪০ শতাংশের নিচে, যা নির্দেশ করছে যে পূর্ববর্তী তালিকার তুলনায় নতুন ভোটারের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের উচ্চ নতুন ভোটার সংখ্যা সীমান্তবর্তী জেলা ও মধ্যবঙ্গের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করছে।

ভোটার তালিকা ম্যাপিং কেন গুরুত্বপূর্ণ? West Bengal Voter List Mismatch

ভোটার তালিকা ম্যাপিং একটি ব্যাপক যাচাই প্রক্রিয়া, যা নির্বাচনের স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করে। এর মূল উদ্দেশ্যগুলো হল:

বিদ্যমান ভোটারের যাচাই: ২০২৫ সালের ভোটার তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা ২০০২ সালের তালিকায় বৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত কিনা তা পরীক্ষা করা। এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী বাসিন্দা এবং প্রকৃত ভোটার নিশ্চিত হয়।

অনিয়ম ও ভুয়া ভোটার শনাক্তকরণ: ডুপ্লিকেট, মৃত, অভ্যন্তরীণভাবে স্থানান্তরিত বা ভুয়া ভোটার চিহ্নিত করা।

Advertisements

নতুন ভোটার নিবন্ধন সহজ করা: যদি বাবা-মায়ের নাম ২০০২ ও ২০২৫ সালের তালিকায় মিল থাকে, তবে সন্তানদের নতুন ভোটার হিসেবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ হয়।

SIR-এর (Special Intensive Revision) প্রস্তুতি: ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই যাচাই প্রক্রিয়া বিশেষ সংযোজনমূলক তালিকার (SIR) ভিত্তি তৈরি করে।

স্বচ্ছতা ও প্রশাসনিক বিশ্বাসযোগ্যতা: পুরো প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকা ডিজিটালভাবে যাচাই ও ক্রস-রেফারেন্স করা হয়। ভুয়া এন্ট্রি দূর করে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়।

প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রভাব

উচ্চ নতুন ভোটারের হার শুধু প্রশাসনিক বিষয় নয়, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এটিকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলা এবং মধ্যবঙ্গের কয়েকটি অঞ্চলে এই হার নির্বাচনী প্রস্তুতি এবং ভোটার সচেতনতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া এই তথ্য কেন্দ্র ও রাজ্য নির্বাচনী অফিসকে আগাম পরিকল্পনা গ্রহণে সাহায্য করবে।

নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই জোর দিয়েছে, প্রতিটি জেলার ম্যাপিং ফলাফল সম্পূর্ণভাবে বিশ্লেষণ করে ভোটার তালিকাকে স্বচ্ছ, সঠিক ও বিশ্বস্ত রাখা হবে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এই উদ্যোগ নিশ্চিত করবে যে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভোটার তালিকা হবে বিশ্বাসযোগ্য ও প্রমাণভিত্তিক।