SIR নিয়ে বিভ্রান্তি: ফর্মে ভুল হলে বা হারিয়ে গেলে কী হবে, জানাল কমিশন?

West Bengal Voter Form Guidance

রাজ্যজুড়ে চলছে বিশেষ নিবিড় সংশোধন-SIR। সকাল-বিকেল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন BLO–রা, হাতে তুলে দিচ্ছেন এনুমারেশন ফর্ম। ইতিমধ্যেই রাজ্যের লক্ষ লক্ষ ভোটার ফর্ম পেয়েছেন, অনেকে আবার তা পূরণ করে জমাও করে দিয়েছেন। তবুও সাধারণ মানুষের মনে রয়ে গেছে নানা প্রশ্ন, উদ্বেগ আর ঘোরতর বিভ্রান্তি। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, ফর্মে ভুল লিখে ফেললে কী হবে? ফর্ম ছিঁড়ে গেলে কি নতুন ফর্ম পাওয়া যায়? কোন ভাষায় ফর্ম লিখবেন? কোন কালি?

Advertisements

এই সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক অরিন্দম নিয়োগী। তাঁর ব্যাখ্যা ভোটারদের ভরসা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক মহল।

   

ফর্ম কোন ভাষায়?

নিয়োগী জানান, ফর্ম ফিলআপের জন্য কোনও নির্দিষ্ট ভাষার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিত্ব আইনে তিনটি ভাষার উল্লেখ আছে, বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি। কোন বিধানসভায় কোন ভাষা প্রাধান্য পাবে, সে বিষয়ে আইন নির্দেশ দেয়।

কিন্তু তাঁর সতর্ক পরামর্শ, “ফর্ম বাংলা বা ইংরেজিতে পূরণ করলে ভবিষ্যতে তথ্য যাচাই সহজ হয়। কারণ বহু জায়গায় দেবনাগরী লিপিতে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয় না।” অর্থাৎ, যে ভাষায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন লিখতে পারেন, তবে বাংলা বা ইংরেজি বেছে নিলে ভুলভ্রান্তি কমে।

কালি নিয়ে কড়াকড়ি নেই West Bengal Voter Form Guidance

কালো বা নীল—এই দুই কালি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কারণ অন্য রঙে লেখা তথ্য স্ক্যানিং বা তথ্য মিলানোর সময় অসুবিধা তৈরি করতে পারে।

ফর্মে ভুল? কাটাকাটি নয়, পদ্ধতিগত সংশোধন

ভুল হলে কী হবে, তা নিয়েই সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। নিয়োগীর ব্যাখ্যা, “যে জায়গায় ভুল হয়েছে সেখানে একটি পেন-থ্রু টেনে দিন। পাশে সঠিক তথ্য লিখুন। এবং অবশ্যই নিজের সই করুন।” এটাই সরকারি নিয়ম। এই প্রক্রিয়াতেই ভুল সংশোধন হবে। পুরো ফর্ম নতুন করে চেয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই।

ফর্ম ছিঁড়ে গেলে? নতুন ফর্ম নেই, সতর্ক থাকুন

এই জায়গাটাই সবচেয়ে কঠিন। নিয়োগীর বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট, “রাজ্যে প্রায় সাড়ে সাত কোটি ভোটার। প্রত্যেকের জন্য ডুপ্লিকেট ফর্ম বের করা সম্ভব নয়। তাই ফর্ম ছিঁড়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে নতুন ফর্ম পাওয়া যাবে না।”

ফলে এনুমারেশন ফর্মকে যত্নে রাখাই একমাত্র পথ।  ভুল বাড়লে একটি বুদ্ধিদীপ্ত বিকল্পও দিয়েছেন তিনি, ভুল বেশি থাকা ফর্মটি নিজের কাছে রেখে দিন৷ যেটি তুলনামূলকভাবে পরিষ্কার, কম কাটাকাটি— সেটি জমা দিন BLO–কে৷ অথবা, মূল ফর্ম ফিলআপের আগে একটি ফটোকপি করিয়ে সেই কপিতে প্র্যাকটিস করে নিলে ভুল কমবে। 

Advertisements
সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করুন BLO–কে

এনুমারেশন ফর্মের প্রথম পাতায় BLO–র নাম ও ফোন নম্বর দেওয়া থাকে। যে কোনও সন্দেহ, বিভ্রান্তি, ভুলভ্রান্তিতে সরাসরি তাঁর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।

নিয়োগীর কথায়, “ফর্ম ফিলআপে সমস্যা হলে প্রথম যোগাযোগের জায়গা হল BLO। তাঁদেরই দায়িত্ব ভোটারদের সাহায্য করা।”

কেন এত প্রশ্ন, এত বিভ্রান্তি?

রাজ্যে গত কয়েক বছরে ভোটার তালিকা নিয়ে বিতর্ক, অভিযোগ এবং রাজনৈতিক উত্তাপ কম হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে SIR নিয়ে সতর্কতা যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে ভুল করার ভয়। BLO বাড়ি বাড়ি গেলেও কোন তথ্য কীভাবে লিখতে হবে— তা নিয়ে অনেকে এখনও নিশ্চিত নন।

কমিশনের ব্যাখ্যা তাই পরিস্থিতি শান্ত করতে কার্যকর। কারণ এই বার্তায় স্পষ্ট—

  • ভুল হলে সংশোধন করা যাবে
  • ফর্ম হারালে আর দ্বিতীয় সুযোগ নেই
  • ভাষা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে
  • এবং BLO–ই শেষ ভরসার জায়গা
ফাইনাল বার্তা

রাজ্যজুড়ে ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণের এই বৃহৎ উদ্যোগের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশিকা ভোটারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ SIR–এ আপনার দেওয়া তথ্যই নির্ধারণ করবে, আগামী বছরের ভোটার তালিকায় আপনার নাম কীভাবে থাকবে।

তাই বার্তা একটাই, ফর্মটি যত্নে রাখুন, মন দিয়ে পূরণ করুন, আর সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে BLO–কে ফোন করুন।