কলকাতার বেসরকারি (Kolkata Bus)বাসগুলির মধ্যে রেষারেষির ঘটনা নতুন কিছু নয়। এই রেষারেষির কারণে বহু নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, এবং এটি শহরের পরিবহন ব্যবস্থায় এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রেষারেষি বন্ধ করতে এবার কলকাতার পরিবহন দফতর (Kolkata Bus) নতুন একটি ব্যবস্থা নিয়েছে, যা হবে প্রযুক্তিনির্ভর। এটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘দওয়াই’। এই ব্যবস্থার আওতায়, বেসরকারি বাসগুলিকে (Kolkata Bus) ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
পরিবহন দফতরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই প্রকল্পের প্রথম পর্ব হিসেবে কলকাতার ১২টি বাস রুটকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে, এই রুটের বাসগুলির(Kolkata Bus) গতিবিধি এবং রেষারেষির ঘটনা ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে নজরদারি করা হবে। বাসের মধ্যে একটি কিউ আর কোড লাগানো থাকবে, যা চালকরা
বাস স্ট্যান্ড থেকে বের করার সময় তাদের মোবাইল দিয়ে স্ক্যান করবেন। এর মাধ্যমে বাসের গন্তব্য, রুট, এবং গতিবিধির সমস্ত তথ্য বাস্তব সময়েই পরিবহন দফতর এবং পুলিশের কাছে চলে যাবে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে, কোনও বাস (Kolkata Bus)যদি রেষারেষি বা অতিরিক্ত গতি প্রয়োগ করে চলতে থাকে, তবে পুলিশ সহজেই তা শনাক্ত করতে পারবে। দ্রুত নিকটবর্তী ট্রাফিক আউট পোস্টে খবর পাঠানো হবে এবং বাসটিকে আটক করা হবে।
এই প্রযুক্তি ব্যবস্থার আরও একটি সুবিধা হচ্ছে যাত্রীরা ‘যাত্রীসাথী’ অ্যাপের মাধ্যমে বাসের গতিবিধি সম্পর্কে জানতে পারবেন। এটি যাত্রীদের জন্য অনেক সুবিধা সৃষ্টি করবে, কারণ তারা আগেভাগে জানাতে পারবেন যে, তাদের বাস কবে এবং কোথায় পৌঁছাবে, এবং কোনও সমস্যা থাকলে তাও অবহিত হতে পারবেন। এতে যাত্রীরা অনেক বেশি নিরাপদ এবং স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারবেন।
তবে এই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবস্থা চালু করার জন্য কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বাস মালিকদের দাবি, কিছুদিন আগেই ভিএলটিডি (ভেহিক্যাল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস) মেশিন বাসগুলিতে বসানোর জন্য অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন আবার নতুন করে চালকদের মোবাইল দেওয়া হবে, যা আরও একটি বড় খরচ। পরিবহন দফতরের কাছে এই অতিরিক্ত খরচের জন্য কিছু অর্থ সাহায্যের দাবি তুলেছেন বাস মালিকরা। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে, যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে তাদের আয়ের পরিমাণ ৯০% কমে গেছে, এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবস্থার জন্য অতিরিক্ত খরচ বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
বাস মালিক সংগঠনগুলির এই দাবি নিয়ে সম্প্রতি একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে প্রধান সচিব বাস মালিকদের আশ্বস্ত করেছেন যে, তাদের সমস্যার সমাধান করা হবে। পরিবহন দফতরের প্রধান সচিব জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে বাস মালিকদের জন্য এই অতিরিক্ত খরচ সামলানো যে সহজ হবে না, তা বুঝতে পেরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে।
এছাড়া, বাস মালিক সংগঠনগুলির দাবি, শহরের বিভিন্ন বাস রুটে যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায় অনেক বাস এখন বন্ধ হয়ে গেছে। অতীতে, যে রুটগুলির মাধ্যমে তারা ভালো লাভ পেত, বর্তমানে সেগুলোর আয়ের পরিমাণ প্রায় ৯০% কমে গেছে। এর ফলে, বাস মালিকরা নতুন করে এই খরচ বহন করতে পারবেন না বলে জানান। তবে পরিবহন দফতর তাদের সমস্যার সমাধানে সহায়তা করবে বলে আশ্বস্ত করেছে।
এখন দেখার বিষয় হবে, কতটুকু সফলভাবে এই ট্র্যাকিং সিস্টেমটি বাস্তবায়িত হয় এবং বাস মালিকদের আর্থিক চাপ কমানোর জন্য পরিবহন দফতর কী ব্যবস্থা নেয়। তবুও, এই নতুন প্রযুক্তি ব্যবস্থা যদি সফলভাবে কার্যকরী হয়, তা হলে কলকাতার বাস সেবার নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা বাড়বে, যা যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।