ভোটার কার্ড সংক্রান্ত সরকারি নিয়মকানুনের কথা শুনলেই অনেকের মনে একটা চিন্তা বা বিভ্রান্তি কাজ করে। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, বা কোন কাগজটা লাগবে—এইসব ভাবতে গিয়েই অর্ধেক কাজ কঠিন মনে হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের SIR-2025 (West Bengal SIR) প্রক্রিয়ার দিকে যদি একটু ভালোভাবে নজর দেওয়া যায়, তাহলে দেখবেন এর কিছু মূল নিয়ম surprisingly বেশ সহজ। এই জটিল মনে হওয়া প্রক্রিয়ার সবচেয়ে জরুরি এবং প্রভাবশালী তথ্যগুলি আমরা ভেঙে সহজ করে দিচ্ছি, যা আপনার সব বিভ্রান্তি দূর করে দেবে।
১. ২০০২ সালের ভোটার লিস্ট: সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু
SIR-2025 প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথিটি হলো ২০০২ সালের ভোটার লিস্ট। আপনার কাজ কতটা সহজ বা জটিল হবে, তা মূলত এর উপরেই নির্ভর করছে।
নিয়মটি খুবই স্পষ্ট: যে সকল নাগরিকের নাম ২০২০ এবং ২০০২—উভয় ভোটার লিস্টেই আছে, তাঁদের কাজ অত্যন্ত সহজ। তাঁদের শুধু ২০০২ সালের ভোটার লিস্টের যে পাতায় তাঁদের নাম আছে, তার একটি জেরক্স কপি এবং একটি রঙিন ছবি জমা দিতে হবে। এটাই এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় সরলীকরণ, যা পুরোনো নথিভুক্ত ভোটারদের জন্য একটি দুশ্চিন্তামুক্ত পথ তৈরি করে দিয়েছে।
২. নতুন ভোটার? আপনার বাবা-মায়ের পুরনো নথিই সবচেয়ে জরুরি
যাঁরা নতুন ভোটার হিসেবে আবেদন করছেন বা যাঁদের নাম ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে একটি নথি প্রায় বাধ্যতামূলক। সেটি হলো, আবেদনকারীর বাবা এবং মায়ের ২০০২ সালের ভোটার লিস্টের জেরক্স কপি।
আশ্চর্যজনকভাবে, এই নিয়মটি আবেদনকারীর বয়সের উপর নির্ভর করে না। আপনার জন্ম ০১-০৭-১৯৮৭ সালের আগে হোক, ০১-০৭-১৯৮৭ থেকে ০২-১২-২০০৪-এর মধ্যে হোক, বা এমনকি ০২-১২-২০০৪-এর পরেও যদি হয়ে থাকে, যদি আপনার নাম ২০০২ সালের লিস্টে না থাকে, তবে বাবা-মায়ের এই নথিটি লাগবেই। এই নিয়মটি পরিচয় এবং বাসস্থান প্রমাণের জন্য একটি প্রজন্মগত সংযোগ স্থাপন করে, যা এই প্রক্রিয়ার একটি মূল ভিত্তি।
৩. বয়স যাই হোক, নতুন আবেদনকারীদের জন্য নিয়ম এখন অনেকটাই এক
নতুন ভোটারদের জন্য সবচেয়ে স্বস্তির বিষয় হলো, তাঁদের বয়স যা-ই হোক না কেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা প্রায় একই। বিভিন্ন বয়সের জন্য আলাদা আলাদা নিয়ম মনে রাখার কোনো ঝামেলা নেই। আপনার নাম যদি ২০০২ সালের লিস্টে না থাকে, তবে নিম্নলিখিত নথিগুলি প্রয়োজন হবে:
* বাবা এবং মায়ের ২০০২ সালের ভোটার লিস্টের জেরক্স কপি।
* নিজের একটি জরুরী কাগজ।
* একটি রঙিন ছবি।
এই নিয়মটি নতুন ভোটারদের জন্য প্রক্রিয়াটিকে অত্যন্ত সহজ করে তুলেছে। বয়সের ভিত্তিতে নিয়মের ভিন্নতা না থাকায় большинства নতুন আবেদনকারীদের জন্য বিভ্রান্তির সুযোগ অনেকটাই কমে গেছে।
৪. পরিচয়পত্র মানে শুধু বার্থ সার্টিফিকেট বা পাসপোর্ট নয়
আগের পয়েন্টে আমরা “নিজের একটি জরুরী কাগজ”-এর কথা উল্লেখ করেছি। অনেকেই ভাবেন, এর মানে হয়তো শুধু জন্ম प्रमाणपत्र (Birth Certificate) বা পাসপোর্ট লাগবে। কিন্তু এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিকল্প রয়েছে, যা নাগরিকদের জন্য খুবই সুবিধাজনক। আপনি নিম্নলিখিত যেকোনো একটি নথি জমা দিতে পারেন:
* Pension Payment Order (পেনশন প্রদানের আদেশ)
* Birth Certificate (জন্ম প্রমাণ পত্র)
* Passport (পাসপোর্ট)
* Board Certificate (স্কুল শংসাপত্র)
* Permanent Residence Certificate (স্থায়ী বাসিন্দা শংসাপত্র)
* OBC/SC/ST Certificate (কাষ্ট শংসাপত্র)
এই তালিকাটি যথেষ্ট নমনীয়। এর ফলে নাগরিকরা তাঁদের কাছে থাকা বিভিন্ন ধরনের নথি, যেমন স্কুলের সার্টিফিকেট বা স্থায়ী বাসিন্দার সার্টিফিকেট ব্যবহার করেও আবেদন করতে পারবেন।
সব মিলিয়ে, SIR-2025 প্রক্রিয়াটি বাইরে থেকে যতটা জটিল মনে হয়, ভেতর থেকে ততটা নয়। মূল কথা হলো—২০০২ সালের ভোটার লিস্টটিই হলো চাবিকাঠি। হয় আপনার নিজের নাম সেই লিস্টে থাকতে হবে, অথবা আপনার বাবা-মায়ের। এই একটি বিষয় মাথায় রাখলেই পুরো প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ হয়ে যায়।
এই তথ্যগুলি জানার পর, আপনার কি ভোটার নিবন্ধীকরণের প্রক্রিয়াটি আরও সহজ বলে মনে হচ্ছে?