৮০০ কিমির প্রাচীর! দূষণ রুখতে বাংলার বড় পরিকল্পনা

ঝাড়খণ্ড সীমান্ত বরাবর ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক ‘সবুজ প্রাচীর’ তৈরি করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। দূষণ রুখতে এই প্রকল্পকে “বায়োশিল্ড” নামে আখ্যা (Green Wall project) দিয়ে…

West Bengal Plans 800 Km Green Wall project to Fight Pollution

ঝাড়খণ্ড সীমান্ত বরাবর ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক ‘সবুজ প্রাচীর’ তৈরি করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। দূষণ রুখতে এই প্রকল্পকে “বায়োশিল্ড” নামে আখ্যা (Green Wall project) দিয়ে শুক্রবার রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কালীপদ রুদ্র জানালেন, এই পরিকল্পনার লক্ষ্য বাংলায় প্রবেশকারী বায়ুদূষণ রুখে দেওয়া এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা।

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রাক্কালে কলকাতায় ভারত চেম্বার অফ কমার্স আয়োজিত ‘Fostering Climate Consciousness — Business and Beyond’ শীর্ষক বিশেষ অধিবেশনে এই ঘোষণা করা হয়।

   

‘গ্রিন ওয়াল’ কীভাবে কাজ করবে?
এই ‘সবুজ প্রাচীর’ মূলত একটি বনাঞ্চল করিডর, যা উত্তর-পশ্চিম বাংলার ঝাড়খণ্ড সীমান্ত বরাবর গড়ে তোলা হবে। প্রকল্পটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে। বীরভূম থেকে উত্তর দিনাজপুর পর্যন্ত বিস্তৃত এই অঞ্চলজুড়ে বনসৃজনের মাধ্যমে তৈরি হবে দূষণ রোধকারী প্রাকৃতিক দেওয়াল।

কালীপদ রুদ্র বলেন, “এই বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম পূর্ণ বিকশিত হতে সময় লাগবে প্রায় এক দশক। কিন্তু যখন গাছগুলো বড় হবে, তখন যেমন মানুষ চিনের গ্রেট ওয়াল দেখতে যায়, তেমনি বাংলায় আসবে এই সবুজ প্রাচীর দেখতে।”

দূষণ রোধে জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি
তিনি আরও বলেন, “শুধুমাত্র দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা চেম্বার কিছু করতে পারবে না, এটা হওয়া উচিত জনগণের আন্দোলন। প্রতিটি নাগরিককে এতে শামিল হতে হবে।” ব্যবসায়ী মহলের ভূমিকাকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কলকাতা: দেশের অন্যতম পরিষ্কার মহানগর
কালীপদ রুদ্র এদিন জানান, কলকাতা সম্প্রতি দেশের অন্যতম পরিষ্কার মহানগর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর কৃতিত্ব দেন কলকাতা পৌরসভা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যৌথ উদ্যোগকে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “শীতকালে বাংলার বায়ু মান অত্যন্ত খারাপ থাকে। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে তুলনামূলক পরিষ্কার হলেও, শীতকালের দূষণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জোর দিতে হবে।”

Advertisements

প্লাস্টিক দূষণ ও জৈব প্লাস্টিকের প্রস্তাব
আলোচনায় পরিবেশ পরামর্শদাতা স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী প্লাস্টিক দূষণের বিপদ নিয়ে কথা বলেন। মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ন্যানোপ্লাস্টিকের কারণে মানুষের শ্বাসযন্ত্র থেকে শুরু করে পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতির আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জৈব প্লাস্টিক হতে পারে একটি কার্যকর, টেকসই বিকল্প।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা জৈব প্লাস্টিক নিয়ে খুব কমই শুনেছি। কিন্তু এর মাধ্যমে প্রযুক্তি ও সমাজের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে এক বাস্তব ও টেকসই সমাধান তৈরি করা সম্ভব।”

শিক্ষার্থী ও সমাজের ভূমিকা
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায় বলেন, “দূষণ রোধে শুধু প্রযুক্তি নয়, মানুষের আচরণগত পরিবর্তনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে, তবেই দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে।” তিনি যোগ করেন, “নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলি যথেষ্ট ভালো কাজ করছে, নতুন প্রযুক্তি আসছে, এবং সাধারণ মানুষও এখন অনেক সচেতন।”

বাংলার এই ৮০০ কিমির বায়োশিল্ড প্রকল্প নিছক বৃক্ষরোপণ নয়—এ এক দীর্ঘমেয়াদি দূষণ বিরোধী কৌশল। এটি শুধুমাত্র পরিবেশ রক্ষার প্রতীক নয়, বরং একটি নতুন সামাজিক আন্দোলনের সূচনা। সবুজ প্রাচীর গড়ে তুলতে গেলে প্রয়োজন নাগরিকের সচেতনতা, ব্যবসায়িক দায়বদ্ধতা এবং সরকার-সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগ। সবুজ থাকুক বাংলা, সবুজ থাকুক ভবিষ্যৎ!