পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি নাবালিকা (Bangladeshi Minor) পাচারের ঘটনায় বড় সাফল্য পেল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। শনিবার গভীর রাতে কলকাতা ও বনগাঁর পাঁচটি আলাদা জায়গায় অভিযান চালিয়ে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। রবিবার এনআইএ সূত্রে জানানো হয়েছে, ধৃতরা হলেন আমির আলি শেখ ও অমল কৃষ্ণ মণ্ডল। দু’জনেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাসিন্দা।
তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতদের সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক পাচারচক্রের যোগ রয়েছে। ওই চক্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে নাবালিকাদের অবৈধভাবে ভারতে এনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করত। পরে তাদের নানাভাবে শোষণ করা হতো। শনিবার রাতের অভিযানে প্রচুর ভারতীয় টাকা, বাংলাদেশি মুদ্রা, বিদেশি নোট এবং একাধিক নথি উদ্ধার হয়েছে।
সূত্রের খবর, পাচারচক্রটি সীমান্তবর্তী এলাকায় সক্রিয় ছিল। উত্তর ২৪ পরগনার মতো জেলায় প্রায়ই বাংলাদেশ থেকে শিশু ও নাবালিকা পাচারের ঘটনা সামনে আসে। এই চক্র সাধারণত দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের টার্গেট করত। পড়াশোনা বা কাজের সুযোগের কথা বলে সীমান্ত পার করানো হতো। কিন্তু ভারতে প্রবেশ করার পর তাদের সমস্ত স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হতো এবং বেআইনি কাজে বাধ্য করা হত।
এনআইএ জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া দুই যুবকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে পাচারচক্রের আরও সদস্যদের খোঁজ চলছে। এই চক্র শুধু পশ্চিমবঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দেশের অন্যান্য বড় শহরেও এর শাখা বিস্তার করেছে। মুম্বই, দিল্লি বা বেঙ্গালুরুর মতো শহরে এই পাচার হওয়া মেয়েদের ব্যবহার করা হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
এদিকে, মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় এই ধরনের চক্র সক্রিয় থাকার অন্যতম বড় কারণ দারিদ্র্য ও বেকারত্ব। পরিবারগুলিকে সচেতন না করলে এবং সীমান্তে কঠোর নজরদারি না থাকলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এনআইএও জানিয়েছে, বিএসএফের সঙ্গে সমন্বয় করে ভবিষ্যতে আরও নজরদারি বাড়ানো হবে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, পাচারকারীরা সাধারণত আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমেই যোগাযোগ করে। ফলে পরিবারগুলি সহজেই প্রলোভনে পা দেয়। যদিও এনআইএ-র সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এই চক্র ভাঙতে বড় ভূমিকা নেবে বলে আশাবাদী তদন্তকারীরা।
ধৃতদের আদালতে পেশ করা হয়েছে এবং কড়া জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মূল মাথাদের নাম বের করার চেষ্টা চলছে। এনআইএ মনে করছে, এই দুই অভিযুক্তের গ্রেফতারি পুরো নেটওয়ার্কটিকে ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে নাবালিকা পাচারের এই ঘটনা ফের একবার প্রমাণ করল যে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মানব পাচার একটি গুরুতর সমস্যা। এনআইএ নিশ্চিত করেছে, আসন্ন দিনে আরও বড়সড় অভিযান হতে চলেছে এবং এর মাধ্যমে পুরো নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা হবে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
