রাজ্য (West Bengal) সরকারের প্রশাসনিক পরিকাঠামোয় আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) যুগান্তকারী ব্যবহার। প্রশাসনিক কাজের গতি, স্বচ্ছতা এবং নাগরিক পরিষেবার মান আরও উন্নত করার লক্ষ্যে এবার আরও এক ধাপ এগোতে চলেছে নবান্ন।
‘দুয়ারে সরকার’ ও ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’-এর মতো সফল প্রকল্পগুলির ডেটার ভিত্তিতে গড়ে তোলা হবে এক আধুনিক ও সুসংগঠিত ‘ইউনিফায়েড সোশ্যাল রেজিস্ট্রি’ (USR)। এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সরকারি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলির উপভোক্তাদের দ্রুত, সঠিকভাবে ও স্বচ্ছতার সঙ্গে চিহ্নিত করা যাবে এবং Direct Benefit Transfer (DBT) পদ্ধতিতে সরকারি সুবিধা সরাসরি পৌঁছে যাবে নাগরিকদের হাতে।
নবান্ন সূত্রে খবর, এই নতুন AI-ভিত্তিক প্রকল্পের নোডাল সংস্থা হিসেবে কাজ করছে রাজ্যের অর্থ দফতর। ইতিমধ্যেই একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি সংস্থাকে ডাকা হয়েছে এই প্রকল্পের জন্য উদ্ভাবনী সমাধান পেশ করতে। ১১ আগস্টের প্রাক্কালে এক Pre-Bid Meeting আয়োজনের কথাও জানানো হয়েছে, যেখানে সম্ভাব্য প্রযুক্তি পার্টনাররা অংশগ্রহণ করবেন।
এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে চারটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করা হবে:
জমির ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ:
জমির বাজারদর, অবকাঠামো ও ভৌগোলিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ AI-চালিত স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নির্ধারিত হবে জমির দাম। এতে একদিকে যেমন দুর্নীতির সম্ভাবনা কমবে, তেমনই ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছেই তৈরি হবে নির্ভরযোগ্যতার পরিবেশ।
ডিজিটাল আর্কাইভ ও নথিপত্রের ডিজিটাইজেশন:
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পুরনো হাতে লেখা জমির নথি ও সরকারি কাগজপত্রগুলো ডিজিটাইজড করা হবে। এতে জমির ইতিহাস বা মালিকানা যাচাই অনেক সহজ হবে, যা নাগরিক এবং প্রশাসন—উভয়ের সময় ও শ্রম বাঁচাবে।
AI-ভিত্তিক ফাইল স্ক্রুটিনি সিস্টেম:
প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগ্রহণের প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও নির্ভুল করতে তৈরি করা হচ্ছে একটি স্বয়ংক্রিয় ফাইল যাচাই ব্যবস্থা, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিশ্লেষণ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে আধিকারিকরা।
ভার্চুয়াল অ্যাগ্রিগেশন এবং ডেটা সমন্বয়:
একাধিক দফতরের তথ্যভাণ্ডারকে একত্রিত করে তৈরি হবে একটি ভার্চুয়াল অ্যাগ্রিগেশন ব্যবস্থা, যেখানে প্রতিটি দফতরের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে, কিন্তু তথ্য যাচাই ও আপডেট হবে একটি কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্মে। এতে ডেটার গুণমান ও নিরাপত্তা—দুটিই সুনিশ্চিত করা যাবে।
অর্থ দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “এই উদ্যোগের মাধ্যমে শুধু যে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়বে তা নয়, বরং রাজ্য সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আরও দৃঢ় হবে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ডিজিটাল রূপান্তর প্রকল্প শুধু বর্তমান প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আধুনিক করবে না, ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। AI-এর সুচিন্তিত প্রয়োগ রাজ্যের গভর্ন্যান্স মডেলকে বদলে দেবে নতুন রূপে, যেখানে প্রযুক্তি ও মানবিক প্রশাসন একসঙ্গে চলবে।
এই প্রকল্প সফল হলে অন্যান্য রাজ্যগুলির কাছেও এটি একটি মডেল হয়ে উঠতে পারে বলে মত প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের।