শ্রমশ্রী প্রকল্পে (Shramashree Scheme) আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে রাজ্যজুড়ে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষার স্বার্থে। বৃহস্পতিবার থেকেই ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ শিবিরে শ্রম দফতরের কর্মীরা আবেদনপত্র সংগ্রহ শুরু করেছেন। একই সঙ্গে ব্লক থেকে জেলা স্তরের আধিকারিকরাও মাঠে নেমে এই কাজ তদারকি করছেন।
খুব শীঘ্রই প্রকল্পটির জন্য একটি নির্দিষ্ট অনলাইন পোর্টাল চালু হবে, যাতে রাজ্যের প্রতিটি প্রান্ত থেকে সহজে নাম নথিভুক্ত করা যায়। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু হলে আবেদন প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও স্বচ্ছ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে আবেদন শুরু হওয়ার সঙ্গেই নবান্ন থেকে এসেছে কড়া নির্দেশ। মূল চিন্তা ভুয়ো আবেদনকারীদের আটকানো। শ্রম দফতর আশঙ্কা করছে, প্রকৃত পরিযায়ী শ্রমিক না হয়েও কেউ কেউ এই প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। সেই কারণে আবেদনকারীদের একটি প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেখানে তাঁদের ভিনরাজ্যে কাজ করার তথ্য উল্লেখ থাকবে। যদিও এটি বাধ্যতামূলক নয়, তবুও দফতর মনে করছে, প্রমাণপত্র থাকলে আবেদন যাচাইয়ের কাজ সহজ হবে।
রাজ্যের শ্রম দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্য একেবারে স্পষ্ট—যাঁরা সত্যিই ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন বা আক্রান্ত হয়ে ফিরে এসেছেন, তাঁদেরই এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। শ্রমশ্রী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হলে প্রত্যেক পরিযায়ী শ্রমিক আগামী এক বছরের জন্য মাসে ৫,০০০ টাকা ভাতা পাবেন। এই ভাতার মাধ্যমে তাঁদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে সরকার। এক বছরের মধ্যে যদি তাঁরা বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ খুঁজে না পান, তবে এই ভাতাই হবে তাঁদের প্রধান ভরসা।
প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য হল রাজ্যে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের পুনর্বাসন করা। কোভিড পরবর্তী সময়ে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক রাজ্যে ফিরে এসেছিলেন এবং তখন থেকেই তাঁদের আর্থিক সুরক্ষার বিষয়ে রাজ্য সরকারের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেছেন, সাধারণ শ্রমিকদের স্বার্থে এই প্রকল্পের কার্যকর বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।
শুধু সুবিধা পৌঁছে দেওয়াই নয়, অসাধু আবেদনকারীদের আটকানোর দিকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে নবান্ন। ব্লক থেকে জেলা স্তরের আধিকারিকদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনওভাবেই ভুয়ো তথ্য দিয়ে কেউ এই প্রকল্পের আওতায় ঢুকে পড়তে না পারে। শ্রম দফতর জানিয়েছে, এই প্রকল্পে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বহুমুখী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার ব্যবস্থা করা হবে।
রাজনৈতিক মহলও শ্রমশ্রী প্রকল্প নিয়ে নজর রাখছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, প্রকল্পটি সঠিকভাবে কার্যকর হলে বহু বিপন্ন পরিযায়ী শ্রমিক নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের কাছে এটি বড় চ্যালেঞ্জ—প্রকৃত প্রাপকদের কাছে সুবিধা পৌঁছে দেওয়া এবং ভুয়ো দাবিদারদের আটকানো।
নবান্ন সূত্রে খবর, এই প্রকল্পে আবেদন গ্রহণ এবং যাচাইয়ের কাজ ধাপে ধাপে এগোবে। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু হলে আবেদন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হবে, যা ভুয়ো আবেদন রুখতে সহায়ক হবে। শ্রমশ্রী প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজ্য সরকার একদিকে যেমন সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাইছে, অন্যদিকে অসাধুদের রুখে সুশাসনের বার্তা দিতে চায়।