রাজ্যের বন্ধ কারখানা ও চা-বাগান শ্রমিকদের (Garden Worker) আর্থিক সহায়তা প্রকল্প আরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে। শ্রমদফতরের উদ্যোগে চালু হতে চলেছে একটি আধুনিক ডিজিটাল পোর্টাল, যার মাধ্যমে রাজ্যের হাজার হাজার প্রান্তিক শ্রমিক সরাসরি সরকারি ভাতা পেতে পারবেন তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
এই নতুন পোর্টালটি তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের রাষ্ট্রায়ত্ব তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ওয়েবেল (Webel)-কে। শ্রমদফতর সূত্রে জানা গেছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই পোর্টাল আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হবে। মূলত, লকআউট, পরিত্যক্ত বা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা কলকারখানা এবং চা-বাগানের শ্রমিকরা (Garden Worker) যাতে সরকারি সহায়তা সহজে পেতে পারেন, তার জন্যই এই নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হচ্ছে।
নিয়ম অনুযায়ী, চা-বাগানগুলির ক্ষেত্রে যদি অন্তত এক মাসের জন্য কাজ বন্ধ থাকে, তাহলে সেই বাগিচার শ্রমিকেরা (Garden Worker) এই আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য উপযুক্ত বলে গণ্য হবেন। অন্যদিকে অন্যান্য শিল্প বা কারখানার ক্ষেত্রে এই যোগ্যতা অর্জনের জন্য কমপক্ষে ছয় মাস ধরে কাজ বন্ধ থাকা আবশ্যক।
শ্রমিকরা (Garden Worker) অনলাইনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
তথ্য যাচাই এবং প্রক্রিয়াকরণ হবে স্বয়ংক্রিয় ও ডিজিটাল।
একবার স্বীকৃত হলে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ভাতা পাঠানো হবে।
পোর্টালে নতুন শিল্প ইউনিট যুক্ত করার সুযোগ থাকবে।
অবসর, মৃত্যু বা পুনঃনিয়োগের ফলে অযোগ্য হয়ে পড়া উপভোক্তাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে।
পোর্টালটি যুক্ত থাকবে রাজ্যের অর্থ দফতরের IFMS পোর্টাল-এর সঙ্গে, যাতে সুনির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ লেনদেন সম্ভব হয়। পুরনো তথ্যভাণ্ডার স্থানান্তরের সুবিধা থাকবে। থাকবে AI (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা)-ভিত্তিক অ্যানালিটিক্যাল রিপোর্ট তৈরির ফিচার। থাকবে সাইবার সিকিউরিটি অডিট, নিরাপদ সার্টিফিকেশন এবং রাজ্য তথ্যকেন্দ্রে হোস্টিংয়ের ব্যবস্থা।
শ্রম দফতরের এক আধিকারিক জানান, “এই ডিজিটাল পোর্টাল চালু হলে আমরা শ্রমিকদের পরিষেবায় স্বচ্ছতা আনতে পারব, ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব কমবে এবং প্রশাসনিক হস্তক্ষেপও অনেকটাই কমবে। এটা আমাদের দীর্ঘদিনের একটি লক্ষ্য ছিল।”
এই উদ্যোগে উপকৃত হবেন বহু প্রান্তিক শ্রমিক, যাঁরা এতদিন প্রশাসনিক জটিলতার কারণে সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। বিশেষত, রাজ্যের বিভিন্ন চা-বাগান ও ছোট শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকদের জন্য এটি একটি বড় সাফল্যের বার্তা নিয়ে আসছে বলে মনে করছেন সমাজকর্মী ও শ্রমিক সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা।
এই ডিজিটাল পদক্ষেপকে ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক স্তরে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি, বিভিন্ন জেলায় শ্রমিক সংগঠন ও ইউনিয়নগুলিকে এই বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শ্রমিক কল্যাণে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ যে এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে চলেছে, তা বলাই যায়।