জমি বা বাড়ি রেজিস্ট্রেশন (Property Registration) সংক্রান্ত সমস্যায় আর দালালদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবার এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিতে চলেছে — নভেম্বরের মধ্যেই চালু হচ্ছে একটি পৃথক হেল্পলাইন নম্বর, যেখানে নাগরিকরা সরাসরি কথা বলতে পারবেন রেজিস্ট্রেশন ডিরেক্টরেটের আধিকারিকদের সঙ্গে।
অর্থ দপ্তরের তত্ত্বাবধানে তৈরি এই নতুন হেল্পলাইন নম্বরের মাধ্যমে জমি–বাড়ি রেজিস্ট্রেশন, ই–ডিড জমা, সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ, কিংবা স্ট্যাম্প ডিউটি সম্পর্কিত যে কোনও সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যাবে। এতদিন এই বিষয়গুলিতে সাধারণ মানুষকে দালালদের আশ্রয় নিতে হত, ফলে সময়, অর্থ ও মানসিক পরিশ্রম — তিনটিই নষ্ট হতো। এবার সেই দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার।
বর্তমানে রাজ্যের সরকারি ওয়েবসাইট igr.wb.gov.in -এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত বহু পরিষেবা অনলাইনে পাওয়া যায়। সেই একই পোর্টালেই আগামী নভেম্বর মাসে প্রকাশ করা হবে নতুন হেল্পলাইন নম্বর। এই নম্বর চালু হলে, নাগরিকরা ফোনের মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও সহায়তা পাবেন।
প্রাথমিক পর্যায়ে এই হেল্পলাইন পরিষেবা চালু হবে ইন্টার্যাক্টিভ ভয়েস রেসপন্স (IVR) সিস্টেমে। অর্থাৎ, কেউ নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করলে তাঁর সমস্যার ধরন অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দেশনা দেওয়া হবে। তাতেও সমস্যা না মিটলে, কলটি স্থানান্তরিত হবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিকের কাছে।
অর্থ দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “দলিল রেজিস্ট্রেশন বা সার্টিফায়েড কপি নিয়ে বহু অভিযোগ আসে। এই হেল্পলাইন চালু হলে মানুষ আর দালালদের উপর নির্ভরশীল থাকবেন না।“
রাজ্য সরকারের রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থায় ইতিমধ্যেই এসেছে প্রযুক্তিগত বিপ্লব। ই–ডিড রেজিস্ট্রেশন, দলিলের সার্টিফায়েড কপি প্রদান, ও স্ট্যাম্প ডিউটি পেমেন্টসহ একাধিক পরিষেবা এখন অনলাইনে করা যায়।
প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত ও কার্যকর করতে সরকার ব্যবহার করছে ‘Micro Service Architecture’ প্রযুক্তি। ফলে এখন পোর্টালের রক্ষণাবেক্ষণ বা আপডেটের সময় গোটা সিস্টেম বন্ধ রাখতে হয় না। অন্যান্য পরিষেবা জারি রেখেই পরিবর্তনের কাজ সম্ভব হচ্ছে।
রাজ্য সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হল স্বচ্ছ, সহজ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গঠন করা। এতদিন নাগরিকদের রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত সমস্যায় দালালদের প্রভাব ছিল প্রবল। কিন্তু নতুন হেল্পলাইন চালু হলে নাগরিকরা সরাসরি সরকারের কাছ থেকে সঠিক পরামর্শ পাবেন। এর ফলে অসাধু দালালচক্রের দৌরাত্ম্য কার্যত কমে যাবে।
রাজ্য অর্থ দপ্তরের মতে, নতুন এই পরিষেবা চালু হলে সময় ও পরিশ্রম উভয়ই বাঁচবে, এবং নাগরিক পরিষেবা হবে আরও স্বচ্ছ ও সহজলভ্য। নভেম্বরের মধ্যেই হেল্পলাইনটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এই উদ্যোগ সফল হলে জমি ও বাড়ি রেজিস্ট্রেশনের জটিল প্রক্রিয়া থেকে সাধারণ মানুষ অনেকটাই মুক্তি পাবেন বলে আশাবাদী প্রশাসন।