বদলে যাচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (West Bengal HS Exam) মূল্যায়নের পদ্ধতি। এবার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ধাঁচেই হবে মূল্যায়ন। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে নেওয়া হয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যার বাস্তবায়ন শুরু হবে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই। ইতিমধ্যে সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “আমাদের আলোচনা এখন চূড়ান্ত স্তরে। খুব শীঘ্রই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দেবো।”
কী কী বদল আসছে?
উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সেমিস্টার ভিত্তিক মূল্যায়ন চালু হয়েছে আগেই। এবার সেই সেমিস্টার পরীক্ষাতেই তৃতীয় পর্যায় থেকে চালু হচ্ছে ওএমআর (OMR) ভিত্তিক পরীক্ষা। ছাত্রছাত্রীরা এখন থেকে নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর ওএমআর শিটে দেবে, যেমনটা দেখা যায় JEE বা NEET-এর মতো পরীক্ষায়। এর ফলে, মূল্যায়নের নির্ভুলতা যেমন বাড়বে, তেমনি কমবে মানবিক ভুলের সম্ভাবনাও।
কার্বন কপি সঙ্গে নিয়েই বাড়ি ফেরা
পরীক্ষা শেষে ওএমআর শিটের একটি কার্বন কপি পরীক্ষার্থীরা সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারবেন। ফলে তারা ঘরে ফিরে মিলিয়ে দেখতে পারবেন কোন প্রশ্নে কী উত্তর দিয়েছেন। এটি পরীক্ষার্থীদের স্বচ্ছ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া বুঝতে সাহায্য করবে বলে মনে করছে সংসদ।
ফল প্রকাশের আগেই নম্বর জানার সুযোগ
আরও এক বড় পরিবর্তন হল, ফল প্রকাশের অনেক আগেই পরীক্ষার্থীরা জানতে পারবেন তারা কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছেন। পরীক্ষার পর নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর বিষয়ভিত্তিক ওএমআর শিট ও সেই অনুযায়ী প্রাপ্ত নম্বর। এতে করে ফলাফলের স্বচ্ছতা যেমন বাড়বে, তেমনি ভুল নম্বর নিয়ে বিতর্কও অনেকটাই এড়ানো যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ওয়েবসাইটে ওএমআর আপলোডের পরিকল্পনা
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে জানানো হয়েছে, প্রত্যেক পড়ুয়ার ওএমআর শিট সংসদের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেওয়া হবে। পরীক্ষার্থী নিজেদের রোল নম্বর ও লগইন আইডির মাধ্যমে নিজের স্ক্যান কপি দেখতে পারবেন।
এই প্রকল্পের প্রথম বাস্তবায়ন হতে চলেছে আসন্ন সেপ্টেম্বরের সেমিস্টার পরীক্ষাতে। অর্থাৎ, চলতি বছরের তৃতীয় সেমিস্টার থেকেই পরীক্ষার্থীরা এই নতুন ব্যবস্থার স্বাদ পেতে চলেছেন।
কেন এই পরিবর্তন?
বহুদিন ধরেই শিক্ষামহলে অভিযোগ উঠছিল, উত্তরপত্র মূল্যায়নে স্বচ্ছতার অভাব এবং নম্বর দেওয়ার পদ্ধতিতে অসঙ্গতি নিয়ে। সংসদ সূত্রে খবর, সেই প্রেক্ষিতেই এই পদক্ষেপ। ডিজিটাল মূল্যায়ন এবং ওএমআর পদ্ধতির মাধ্যমে ভবিষ্যতের পরীক্ষাও আরও দ্রুত, নির্ভুল এবং প্রযুক্তিনির্ভর হবে বলে আশাবাদী শিক্ষা সংসদ।
পড়ুয়াদের প্রতিক্রিয়া
নতুন এই ব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীরাও আশাবাদী। উচ্চ মাধ্যমিকের এক পরীক্ষার্থী বলেছে, “ওএমআর পদ্ধতিতে ভুল কম হবে। কার্বন কপি থাকলে পরীক্ষার পরে কী লিখেছি সেটা মিলিয়ে দেখতে পারব, এটা খুবই ভালো উদ্যোগ।”
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় এই বড় পরিবর্তন ভবিষ্যতের মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও স্বচ্ছ করে তুলবে বলেই মনে করছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা। পরীক্ষার্থীদের জন্য এটা এক ইতিবাচক পদক্ষেপ, যা তাদের আত্মবিশ্বাস ও প্রস্তুতির মান আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে। এখন দেখার অপেক্ষা, আগামী দিনে এই ব্যবস্থায় আর কী কী পরিবর্তন আনা হয় সংসদের তরফে।