SIR আবহে হাকিমপুর সহ সীমান্ত পরিদর্শনে রাজ্যপাল

west-bengal-governor-border-visit-sir-illegal-migrants

কলকাতা, ২৪ নভেম্বর: রাজ্য রাজনীতির তপ্ত পরিবেশের মাঝেই নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রবিবার রাজ্যপাল ঘোষণা করলেন, খুব শীঘ্রই তিনি ভারত–বাংলাদেশ সীমান্ত পরিদর্শনে যাবেন। কারণ চলমান বিশেষ তীব্র পুনর্বিবেচনা (SIR) প্রক্রিয়ার মধ্যে হাজার হাজার মানুষ বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সীমান্তে এসে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠছে।

Advertisements

তাঁদের অনেকেই নাকি বহু বছর আগে অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন এমনই নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রের ইঙ্গিত। তাঁর দায়িত্বের তৃতীয় বর্ষপূর্তির দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যপাল বলেন, “আমি সোজাসুজি মন্তব্য করতে চাই না। সীমান্তের পরিস্থিতি নিজে না দেখা পর্যন্ত কিছু স্পষ্ট করে বলা ঠিক হবে না। আমি খুব শিগগিরই সীমান্তে যাচ্ছি। তারপরই মন্তব্য করব।”

   

শীতকালীন অধিবেশনে নেলী গণহত্যা রিপোর্ট জুবিন মৃত্যুতে রাজনৈতিক ঝড়ের আশঙ্কা

উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর থানার হাকিমপুর সীমান্ত ঘাটে রবিবার সকাল থেকেই হাজারো মানুষের ভিড় জমে যায় সকলে যাতায়াতের কাগজ দেখিয়ে বাংলাদেশে ফেরার আবেদন জানাচ্ছিলেন। যদিও বিএসএফ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও সরকারি বিবৃতি প্রকাশিত হয়নি, সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানাচ্ছে SIR প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকা বিশুদ্ধকরণের কারণে অনেকেই নিজেদের পরিচয় প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।

SIR নিয়ে আতঙ্ক প্রসঙ্গে রাজ্যপাল জনগণকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, “ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে। সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনীয় সমাধান করা হবে। আমাদের একটাই লক্ষ্য দেশের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।”

Advertisements

এদিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা অভিযোগ BLO-দের অতিরিক্ত চাপ, মৃত্যু এবং দুর্ব্যবহারের বিষয়েও রাজ্যপাল সংযত অবস্থান নিলেন। তিনি বলেন, “তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না জানানোই ভালো। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য খতিয়ে দেখা হবে। আমাদের দরকার হিংসা-মুক্ত বাংলা, দুর্নীতি-মুক্ত বাংলা।”

তবে সকালে রাজভবনের পরিবেশ ছিল উৎসবমুখর। তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে যোগব্যায়াম করে দিন শুরু করেন রাজ্যপাল। পরে সাংবাদিকদের উদ্দেশে আবেগের সঙ্গে বলেন, “চতুর্থ বর্ষের শুরুতে আমি বলতে চাই মানুষের ভালোবাসা পাওয়া আমার জীবনের বড় অর্জন। এখন আমার লক্ষ্য আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছনো।”

তিনি জানান, বাকি দুই বছরের আমলে তিনি শিশু, প্রবীণ এবং গ্রামবাংলার মানুষদের জন্য বেশি সময় ব্যয় করতে চান। “রাজভবনের দরজা সবার জন্য খোলা থাকবে,” বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গত দুই বছরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে টানাপোড়েন, বিল অনুমোদনে দেরি, রাজনৈতিক মন্তব্য সবটাই ছিল সংবাদমাধ্যমের আলোচনার বিষয়। সে প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠতেই রাজ্যপাল অকপটভাবে বলেন, “রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কের উত্থান–পতন তো থাকবেই। সেটাই গণতন্ত্রের অংশ। দায়িত্ব পালন করতে গেলে এমনটা হতেই পারে।”

দিনের শেষে রাজভবনে অনুষ্ঠিত হয় ১০০ দম্পতির গণ-বিবাহ অনুষ্ঠান। প্রতিটি বিবাহের জন্য ব্যক্তিগত দায়িত্ব গ্রহণ করেন রাজ্যপাল যা প্রশাসনিক কাজের বাইরেও সামাজিক উদ্যোগের বার্তা রাখল। সীমান্ত ইস্যু, SIR, রাজ্য–রাজভবন সংঘাত এবং আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে রাজ্যপালের সীমান্ত সফরের ঘোষণা রাজনৈতিক মহলে বড় ইঙ্গিত বহন করছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। এখন নজর থাকবে — সীমান্ত সফর শেষে রাজ্যপাল ঠিক কী মন্তব্য করেন।