পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল ক্রমশ ধ্বসের মুখে। এবার আরও এক বিপর্যয়ের খবর সামনে এল। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক প্রসূতির মৃত্যুর পর স্যালাইন বিভ্রাটের অভিযোগ ওঠে। পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের কিছু নির্দিষ্ট ব্যাচের স্যালাইন ব্যবহার করেই কিছু প্রসূতি রোগীর শারীরিক সমস্যা শুরু হয়। তারপরেই এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর ঘটনার পরই স্যালাইন বিভ্রাটের খবর সামনে আসে। এরপরেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে, রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের সব ওষুধ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
প্রথমে সোমবারের নির্দেশিকায় শুধু রিঙ্গার ল্যাকটেটের স্যালাইনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে মঙ্গলবারের নির্দেশিকায় পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের অন্যান্য সমস্ত ওষুধের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে র্যনিটিডিন (অ্যাসিডিটি), সেফট্রিয়াক্সোন (অ্যান্টিবায়োটিক), অনডানসেট্রন (বমি ভাব কমানোর ওষুধ), ফেন্টানাইল সিট্রেট (ব্যথা কমানোর ওষুধ), এবং অক্সিটোসিন (প্রসবের গতি বাড়াতে এবং প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে ব্যবহৃত ওষুধ)।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রথম থেকেই স্যালাইন বিভ্রাটের অভিযোগ তুলেছিলেন, যা বর্তমানে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের কাছেই সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। তবে, বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা আরও কিছু দিক খতিয়ে দেখছেন এবং মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ধারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো জানিয়েছেন,যে স্যালাইন ব্যাচটি ব্যবহার করা হয়েছিল, তাতে ২-৩ বছর আগে থেকেই প্রসূতির সমস্যা দেখা দিচ্ছিল।
এই নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং অন্যান্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন নির্দেশিকা মেনে চলতে বলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের ওষুধ ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তটি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, কারণ এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু ওষুধ বেশ জনপ্রিয় এবং অনেক চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে এদের ব্যবহার করে আসছেন।
রাজ্য সরকার এই বিষয়টি নিয়ে আরো তদন্তের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার কথা ঘোষণা করেছেন। এই সংস্থার প্রধান ডিরেক্টর শিলিগুড়ি এবং দ্বিতীয় ডিরেক্টর মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে থাকেন। রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই সংস্থার বিরুদ্ধে আগে থেকেই অভিযোগ তুলে আসছিলেন।
প্রসূতি মৃত্যুতে তোলপাড় রাজ্য। এই ঘটনা রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এক বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। রাজ্যের সাধারণ জনগণের মধ্যে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো তদন্তের মাধ্যমে সুরাহা করা না হলে, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে, যা চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরও বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে।