পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision – SIR) প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই রাজ্যজুড়ে নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ। সেই প্রেক্ষিতে বুথ ম্যাপিং প্রক্রিয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক (CEO) দফতর সূত্রে খবর, সাতটি জেলার বুথ ম্যাপিং ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে এবং ২০০২ সালের SIR তথ্যের সঙ্গে পুরোপুরি মিলিয়ে দেখা হয়েছে।
অন্য জেলাগুলিতেও দ্রুত কাজ চলছে। তবে দীপাবলি উৎসবের ছুটি শুরু হচ্ছে ১৮ অক্টোবর থেকে, তাই তার আগেই সমস্ত জেলা প্রশাসনকে বুথ ম্যাপিং সম্পূর্ণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যজুড়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩.৪৮ কোটি ভোটারের নাম নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। মোট ভোটার সংখ্যা ২০২৫ সালের তালিকা অনুযায়ী ৭.৬ কোটি।
এদিকে, মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দফতর পূর্ব মেদিনীপুরের ইলেকটোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO)-এর কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছে। কারণ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন যে খড়গপুর সদর বিধানসভা এলাকার আটজন বুথ লেভেল অফিসার (BLO) তৃণমূল কংগ্রেসের একটি রাজনৈতিক সভায় অংশ নিয়েছেন।
অধিকারী তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া X-এ পোস্ট করে দাবি করেন, “এটি নির্বাচনী নিরপেক্ষতার ওপরে সরাসরি আঘাত। তৃণমূল প্রশাসন ভোট প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে। এই BLO-রা শিক্ষিকা এবং সরকারি কর্মী হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক মঞ্চে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে।”
তিনি আরও লেখেন, “এই BLO-দের অবিলম্বে বরখাস্ত করে তদন্ত শুরু করা উচিত। এরা ভোটার তালিকা প্রভাবিত করতে পারেন, যা নির্বাচনের নিরপেক্ষতার জন্য বিপজ্জনক।”
অধিকারী যাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন তাঁরা হলেন— বুথ নম্বর ৩৪: অনিমা মুখার্জি, বুথ নম্বর ৩৫: এম দুর্গারাণী, বুথ নম্বর ৩৬: চন্দনা দাস মহান্তি, বুথ নম্বর ৩৭: রমণন্দ তেওয়ারি, বুথ নম্বর ৩৮: রবীন্দ্রনাথ, বুথ নম্বর ৩৯: আর জ্যোতি লক্ষ্মী, বুথ নম্বর ৪০: দিবাকর সিংহ এবং বুথ নম্বর ৪১: মালবিকা মণ্ডল।
তৃণমূল কংগ্রেসের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী (মুনমুন) এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “ওই BLO-দের দুর্গাপুজোর পর একটি সৌজন্য সভায় ডাকা হয়েছিল। এতে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।”
অন্যদিকে, রাজ্য কংগ্রেস-ও এই বিষয়ে সুর চড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সুভঙ্কর সরকার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল-এর সঙ্গে দেখা করে দাবি জানায়, “SIR শুরু হওয়ার আগে রাজ্যজুড়ে একটি অল পার্টি মিটিং করা জরুরি, যাতে বিহারের মতো অনিয়ম পশ্চিমবঙ্গে না ঘটে।”
এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস পাল্টা প্রস্তুতি নিচ্ছে অ্যান্টি-SIR ক্যাম্পেইন-এর। উৎসব মরসুম শেষে কলকাতায় একটি মেগা র্যালি আয়োজনের পরিকল্পনা করছে দল। জানা গিয়েছে, ওই সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকবেন এবং বক্তৃতা দেবেন।