কলকাতা: এসএসকেএম ও উলুবেড়িয়া মেডিকেল কলেজে পরপর ঘটনার পর হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসন। শনিবার নবান্নে ডাকা হয় জরুরি বৈঠক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নির্দেশে এই বৈঠকের আয়োজন করেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে বৈঠকে উপস্থিত থেকে হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদার করতে একাধিক নির্দেশ দেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারে নির্ভুল হতে হবে। নিচু স্তরের নিরাপত্তা রক্ষী বা সিভিক ভলান্টিয়ারদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশিক্ষিত কর্মী থাকলে দ্রুত ও সঠিকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে।”
তিনি আরও জানান, “যে সব সিসিটিভি নষ্ট অবস্থায় আছে, সেগুলো তড়িঘড়ি বদলাতে হবে। সমস্ত ক্যামেরা সচল রাখতে হবে, যাতে হাসপাতালের প্রতিটি অংশে পর্যাপ্ত নজরদারি থাকে।” মুখ্যমন্ত্রীর মতে, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই নিরাপত্তা বজায় রাখার মূল চাবিকাঠি।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রাইভেট সিকিউরিটি এজেন্সিগুলোর বিষয়েও কঠোর নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “যে সব প্রাইভেট এজেন্সি হাসপাতালে নিরাপত্তার কাজ করছে, তাদের পুলিশের ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। সব জায়গায় যত্রতত্র প্রাইভেট এজেন্সির কর্মীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে না।”
অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার উপরও জোর দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “প্রতিটি হাসপাতালেই ফায়ার অডিট করে নিতে হবে। অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম সবসময় আপডেট রাখতে হবে।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, হাসপাতাল মানেই জীবন বাঁচানোর জায়গা, তাই সেখানে কোনও অব্যবস্থা বা গাফিলতি চলবে না।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “হাসপাতালের উন্নয়নমূলক কাজ কোনো অবস্থাতেই বন্ধ করা যাবে না। উন্নয়ন ও নিরাপত্তা—দুটোই একসঙ্গে চলতে হবে।” পাশাপাশি, তিনি উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে রিলিফের কাজ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট দফতরকে।
বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার ত্রুটি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক বার্তা দেন। তাঁর কথায়, “যদি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীদের গাফিলতির কারণে কোনও সমস্যা হয়, তবে সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই দায় নিতে হবে। দায়িত্ব এড়ানো চলবে না।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতালেই নতুন করে নিরাপত্তা পর্যালোচনা শুরু হবে। প্রতিটি হাসপাতালে সিসিটিভি আপগ্রেড, ফায়ার সেফটি অডিট এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যদফতরের মুখ্যসচিব, হেলথ ডিরেক্টর, কলকাতা পুলিশ ও হাওড়া পুলিশের প্রতিনিধিরা। প্রশাসনিক মহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়িত হলে রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মান অনেকটাই উন্নত হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রোগীর নিরাপত্তা এবং চিকিৎসা পরিষেবার গুণমান—এই দুটো বিষয়ই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতালকে এই নীতির প্রতি অটল থাকতে হবে। কোনও অবহেলা হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নবান্ন সূত্রে খবর, আগামী এক মাসের মধ্যেই হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা সংক্রান্ত রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে জমা দিতে হবে। এই উদ্যোগের ফলে পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতাল নিরাপত্তায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে প্রশাসনিক মহলের আশা।


