রাজ্যের কৃষি বিপণন দপ্তরের উদ্যোগে এবার পেঁয়াজ চাষে আসছে বিপ্লব। মহারাষ্ট্রের নাসিকের উপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে বাংলাতেই তৈরি হচ্ছে বিশাল পরিকাঠামো পেঁয়াজ সংরক্ষণের (Onion Storage) জন্য। রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে মোট ৭৭৫টি পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার বা ‘পেঁয়াজ গোলা’ তৈরি করা হবে। এতে একদিকে যেমন স্থানীয় চাষিরা লাভবান হবেন, তেমনি বাজারে সারা বছর পেঁয়াজের যোগান স্বাভাবিক থাকবে।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, হুগলি জেলাতেই তৈরি হচ্ছে ১৭৫টি পেঁয়াজ গোলা। হুগলি সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে এক বৈঠকে এই প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন বেচারাম মান্না। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক তরুণ ভট্টাচার্য, জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধারা, কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মদনমোহন কোলে এবং কৃষি দপ্তরের অন্যান্য আধিকারিকরা।
হুগলি জেলায় অনলাইনে মোট ৩৫২ জন চাষি আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ১৭৫ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। নির্বাচিত প্রত্যেক চাষি পাবেন ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা করে সরকারি ভর্তুকি, যা দিয়ে তাঁরা নিজস্ব সংরক্ষণাগার নির্মাণ করতে পারবেন।
বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পেঁয়াজের ফলন বেশি হলেও সংরক্ষণের জায়গা না থাকায় অধিকাংশ চাষি বাধ্য হন মাঠ থেকেই তা বিক্রি করতে। এতে একদিকে চাষিরা লাভবান হতে পারেন না, অন্যদিকে বাজারে সারা বছর পেঁয়াজের জোগানও কমে যায়। ফলত, কিছু মাসের মধ্যেই রাজ্যের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে। মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, ফলে পরিবহন খরচও যোগ হয় দামের সঙ্গে। সেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান আনতেই রাজ্য সরকার এবার ‘পেঁয়াজ গোলা প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে।
মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “১০টি পেঁয়াজ উৎপাদক জেলায় ৭৭৫টি পেঁয়াজ গোলা তৈরি করা হবে। এর মধ্যে হুগলিতে রয়েছে ১৭৫টি। অনেক সময় জোগান কম থাকায় পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা কেজিতেও পৌঁছে যায়। এই সংরক্ষণাগার তৈরি হলে সেই সমস্যা আর থাকবে না।”
মন্ত্রী আরও জানান, “চাষিরা যাতে উৎপাদনের সময় ন্যায্য দাম পান এবং বছরভর বিক্রি করতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের তরফে আমরা চাষিদের সমস্ত রকম সহায়তা করব।”
এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ৯ কোটি ৬৫ লক্ষ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা, এবং গোলাগুলির মোট সংরক্ষণক্ষমতা হবে প্রায় ২৫ লক্ষ মেট্রিক টন। রাজ্যের মোট ২২৬১ জন আবেদন করেছেন এই প্রকল্পে অংশ নেওয়ার জন্য। ধাপে ধাপে বাকি জেলাগুলিতেও গোলা নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে জানান মন্ত্রী।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পেঁয়াজ চাষিরা এই সিদ্ধান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা দাবি করে আসছিলেন সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিকাঠামোর। এখন রাজ্য সরকার নিজে উদ্যোগী হয়ে গোলা তৈরি করায় তাঁদের আশা, আর অকাল বিক্রি বা পচনজনিত ক্ষতি হবে না।
চাষিরা বলছেন, “এখন আমরা আলুর মতো পেঁয়াজও সারা বছর রাখার সুযোগ পাব। এতে দাম কমে যাবে না, বরং স্থিতিশীল থাকবে। এতে আমাদেরও লাভ, রাজ্যেরও লাভ।”