কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Amit Shah) সাম্প্রতিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবার জবাব দিতে বিধানসভার আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে ধরতে প্রস্তুতি নিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার (West Bengal government)। নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হতে চলা এই অধিবেশনে রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের আচরণের বিষয়ে একটি বিশেষ প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই প্রস্তাবে রাজ্যের মন্ত্রী এবং বিধায়করা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পশ্চিমবঙ্গের বঞ্চনার বিস্তারিত হিসাব তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।
আরজি কর মামলায় সিবিআইকে দ্রুত তদন্ত চালানোর নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি এবং বণ্টন প্রক্রিয়ায় বাংলা বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রাজ্যের। রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, বিশেষ করে আর্থিক বরাদ্দ, বিভিন্ন প্রকল্পের তহবিল মঞ্জুর এবং মঞ্জুরিকৃত অর্থ আটকে রাখার মতো বিষয়গুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। এর ফলে রাজ্যের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ এর ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি আসন্ন বিধানসভা অধিবেশনে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। রাজ্যের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের এই বঞ্চনা মূলত রাজনৈতিক কারণে এবং কেন্দ্র বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও, বাংলার প্রতি বরাবরই বৈষম্যমূলক আচরণ করে চলেছে। রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একজোট হয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন তৃণমূল বিধায়করা।
India-Canada conflict: তীব্রতর ভারত-কানাডা সংঘাত, দু-দেশেই বন্ধ হল কনস্যুলেটস
এদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সাম্প্রতিক এক সভায় পশ্চিমবঙ্গের আইন-শৃঙ্খলা এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্যের শাসন ব্যবস্থাকে আক্রমণ করেন। শাহ দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রের অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না এবং রাজ্যে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। শাহের এই মন্তব্যের পর থেকেই নবান্নে এ বিষয়ে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
বিধানসভার আসন্ন অধিবেশনে তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যরা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে অব্যাহত বঞ্চনা এবং অর্থ মঞ্জুর না করার অভিযোগ তুলে ধরবেন। সরকারের দাবি, মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন (MGNREGA), প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, আয়ুষ্মান ভারত এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির অধীনে মঞ্জুরিকৃত অর্থ কেন্দ্র আটকে রেখেছে, যা বাংলার গ্রামাঞ্চলে সেবা এবং উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্র ও রাজ্যের এই দ্বন্দ্ব আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস এই কেন্দ্রীয় বঞ্চনাকে হাতিয়ার করে বাংলার জনগণের সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করবে। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার এই তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরার উদ্দেশ্য হল বাংলার মানুষের অধিকার এবং উন্নয়নের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া।
কে এই ভারতীয়? ট্রাম্প প্রশাসনে CIA চিফ হবেন তিনি, কান পাতলে ফিসফাস….
এছাড়া, বিধানসভা অধিবেশনের আলোচনায় তৃণমূলের তরফে এই বিষয়গুলোকে সামনে এনে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা রয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের তহবিল কেন আটকে রাখা হচ্ছে, কেন্দ্র কীভাবে বাংলার অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রতি অবহেলা দেখাচ্ছে, সেই সব প্রশ্নও তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে।
সর্বোপরি, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার এই বিষয়টি বিধানসভা অধিবেশনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে এবং কেন্দ্র-রাজ্যের সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত করতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।