আবহাওয়ায় কমছে চায়ের উৎপাদন, দার্জিলিঙের ‘বিষফোঁড়া’ শ্রমিক আন্দোলন

দার্জিলিংয়ের চা শিল্পে চলতি বছরে এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। খারাপ আবহাওয়া, শ্রমিক আন্দোলন এবং বেড়ে চলা লোকসানের কারণে অনেক চা বাগান মালিক এখন বাগান বিক্রির…

Iran-Israel War Casts Shadow on Dooars Tea Industry; Orthodox Tea Exports Worth ₹150 Crore Stalled

দার্জিলিংয়ের চা শিল্পে চলতি বছরে এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। খারাপ আবহাওয়া, শ্রমিক আন্দোলন এবং বেড়ে চলা লোকসানের কারণে অনেক চা বাগান মালিক এখন বাগান বিক্রির চেষ্টা করছেন। তবে, বাজারে খদ্দের মিলছে না। দার্জিলিংয়ের ৮৭টি চা বাগানের মধ্যে অন্তত ৪০টি বাগান মালিক লোকসানের মুখে দাঁড়িয়ে বাগান বিক্রির চেষ্টা করছে। ২০২৪ সালে দার্জিলিং চায়ের উৎপাদন ৫.১ মিলিয়ন কেজিতে নেমে এসেছে, যা গত বছরের ৬.১ মিলিয়ন কেজি থেকে প্রায় ২০ শতাংশ কম। বিশেষ করে, ‘ফার্স্ট ফ্লাশ’ চায়ের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এই মরশুম শুরু হলেও বৃষ্টির অভাবে চা গাছের পাতা যথাযথভাবে মেলেনি। এর ফলে ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে চায়ের উৎপাদন প্রায় পুরোপুরি ব্যাহত হয়েছে।

দার্জিলিং চায়ের সবচেয়ে ভালমানের ‘ফার্স্ট ফ্লাশ’ পাতা থেকে সাধারণত ২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপন্ন হয়, যা মোট উৎপাদনের ২০ শতাংশের সমান। এই চা প্রধানত জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডে রফতানি করা হয়। কিন্তু এবারে বৃষ্টির অভাবে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ রূপে ব্যাহত হয়েছে।এছাড়া, গত দুই দশকে দার্জিলিং পাহাড়ে বৃষ্টিপাত প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেছে, যার কারণে চায়ের গুণগতমানও কমছে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন চা উৎপাদনে বিরাট প্রভাব ফেলেছে। তবে এই সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্রমিকদের আন্দোলন। মিরিক সহ বিভিন্ন চা বাগানে শ্রমিকরা পুজো বোনাসের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে, যা চা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। শ্রমিকরা এই আন্দোলনকারীদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা। তারা নিজেদের জমি ছাড়তে নারাজ এবং সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিতে আন্দোলন করছেন।

   
Advertisements

নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা জানিয়েছেন, চা বাগান মালিকরা এখন বিক্রির জন্য খদ্দের খুঁজছেন, কিন্তু বাজারে তারা খদ্দের পাচ্ছেন না। আরও কয়েকটি বাগান ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। সতীশ মিত্রুকা, নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি জানিয়েছেন, একদিকে প্রকৃতির বিরূপ অবস্থা, অন্যদিকে শ্রমিক আন্দোলন এবং নেপালের নিম্নমানের চা দার্জিলিংয়ের বাজারে আসা, সব মিলিয়ে দার্জিলিং চা শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, চা বাগান মালিকদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক এবং চা পর্ষদ কার্যত নীরব, যা তাদের আরও অসুবিধায় ফেলছে। পাহাড়ের চা শিল্পের ভবিষ্যৎ এখন বেশ অনিশ্চিত, এবং সঠিক পদক্ষেপ না নিলে আরও বড় বিপর্যয় হতে পারে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই সমস্যা থেকে কীভাবে উদ্ধার পাবে দার্জিলিং চা শিল্প এবং কীভাবে সরকার ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি চা বাগানগুলির সুরক্ষা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।