কলকাতা, ১ ডিসেম্বর: পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিভিন্ন জেলাজুড়ে শান্তিপূর্ণভাবেই শুরু হলেও অভিযোগ উঠেছে যে এই নিয়োগ প্রক্রিয়াতে চলছে বেলাগাম জোচ্চুরি। বিজেপি নেতা এবং আইনজীবি তরুণজ্যোতি তিওয়ারি তার এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে এই অভিযোগ করেছেন।
নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে একাধিক স্কুল ও কলেজে। সকাল থেকে দীর্ঘ লাইন, প্রবল উৎসাহ, উদ্বেগ সব মিলিয়ে স্বভাবতই প্রত্যাশার চাপ ছিল তুঙ্গে। তরুণজ্যোতি অভিযোগ করেছেন “কার্বন কপি দেওয়া হলো না কেন?”
অনেক পরীক্ষার্থী জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র বা ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যা না থাকলেও OMR শিটের কার্বন কপি নিয়ে বিশাল বিভ্রান্তি দেখা গেছে। সাধারণত OMR কার্বন কপির মূল উদ্দেশ্য থাকে পরীক্ষার্থী নিজের লেখা উত্তরের একটি কপি বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবেন। এতে পরবর্তীতে মেধাতালিকা প্রকাশের সময় নিজেদের নম্বর মিলিয়ে দেখতে সুবিধা হয় এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় থাকে।
কিন্তু আজ দেখা গেল, পরীক্ষার্থীদের কার্বন কপি নিতে দেওয়া হয়নি। এমনকি অনেক কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের জানানো হয়েছে, অরিজিনাল OMR ও কার্বন কপি দুটি আলাদা করে ভিন্ন ফাইলে সংরক্ষণ করা হবে। এতে আরও বাড়ছে সন্দেহ। তরুণ জ্যোতি প্রশ্ন করেছেন “কার্বন কপি রেখে দিলে তো প্রার্থীদের সুবিধে হতো।
২০২৬-এ নন্দীগ্রাম থেকে লড়বেন? বড় ইঙ্গিত অভিষেকের
তাহলে কেন আলাদা করে জমা নিলেন? যদি স্বচ্ছতা থাকে, তাহলে কপি দিতে সমস্যা কোথায়?” এই প্রশ্নের উত্তর পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছ থেকেও স্পষ্টভাবে মেলেনি। কেউ বলেছেন “নতুন নিয়ম”, কেউ জানিয়েছেন “বোর্ডের নির্দেশ”, কিন্তু লিখিত কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা কোথাও দেওয়া হয়নি।
চাকরিপ্রার্থী ও চাকরিহীন যুব সমাজের বড় একটি অংশ মনে করে, রাজ্যের বহু বড় নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে শুরু করে মূল্যায়নে অনিয়ম বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ বারবার সামনে এসেছে। যদিও সরকার সবসময়ই তাদের প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও বহুপদক্ষেপ জবাবদিহিমূলক বলে দাবি করে এসেছে। এদিকে, পরীক্ষা চলার মধ্যেই নদিয়ায় এক স্থানীয় তৃণমূল নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে খবর ছড়ায়। ঠিক কোন অভিযোগে গ্রেফতার তা এখনও সরকারি ভাবে জানানো হয়নি। তবে এই ঘটনার সময় নির্বাচন বা নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক আছে কি না তা নিয়েও নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশাসন অবশ্য এ বিষয়ে নীরব।
রাজনৈতিক মহলে অবশ্য পুরো ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলো দাবি করেছে, রাজ্য সরকারের অধীনে নিয়োগপ্রক্রিয়া দিন দিন কমছে স্বচ্ছতা, বাড়ছে প্রশ্নচিহ্ন। তরুণজ্যোতির বক্তব্য, “রাজ্যের প্রায় প্রতিটি চাকরির পরীক্ষাতেই আমরা দেখি হঠাৎ নিয়ম বদলে দেওয়া, উত্তরের কপি না দেওয়া, প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি। এটা আজকের ঘটনা নয়। কিন্তু আজ যেটা ঘটল—কার্বন কপি থাকার পরও তা না দেওয়া—এটা তো স্পষ্টত সন্দেহ তৈরি করছে।”
অন্যদিকে প্রশাসন সূত্রের দাবি, “নিয়োগপ্রক্রিয়া কড়া নজরদারিতে চলছে। সব কেন্দ্রেই সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হয়েছে।” যদিও কার্বন কপি নিয়ে প্রশ্নে কেউ এখনও আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেননি। দিনশেষে যে বিষয়টি স্পষ্ট—পরীক্ষার্থীরা স্বচ্ছতা চান। সরকারের তরফে যদি দ্রুত ও স্পষ্ট ব্যাখ্যা না আসে, তবে আগামী দিনে এই অভিযোগ আরও বড় আকার নিতে পারে। কারণ চাকরি শুধুই একটি পরীক্ষা নয়—হাজারো পরিবারের ভবিষ্যতের স্বপ্ন ও আস্থার প্রতিফলন।
