বাজেট পেশের পর কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর

আজ রাজ্যের তৃতীয় তৃণমূল সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট (WB Budget 2025) পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এই বাজেট পেশ করা হয়।…

CM Mamata's Strong Criticism Against Central Neglect After Budget Presentation

আজ রাজ্যের তৃতীয় তৃণমূল সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট (WB Budget 2025) পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এই বাজেট পেশ করা হয়। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে এই বাজেটে রাজ্যের উন্নয়নমূলক এবং জনমুখী প্রকল্পের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। রাজস্ব ঘাটতি মেটানোও এক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

এই বাজেটে (WB Budget 2025) রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা এবং অন্যান্য খাতে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যে দেউচা পাঁচামি প্রকল্পে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। রাজ্যের বিদ্যুৎ সমস্যা মেটানোর জন্যও বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেউচা পাঁচামির কয়লা উত্তোলন হলে বিদ্যুতের দাম কমবে বলেও আশাবাদী তিনি।

   

মুখ্যমন্ত্রী বাজেটের পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রের বাজেটের প্রতিশ্রুতির তুলনায় রাজ্য সরকারের বাজেটের বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় বাজেটে শুধুই প্রতিশ্রুতি থাকে, তবে আমরা নিজস্ব রাজস্ব থেকে বাজেটে বরাদ্দ করি এবং যা বলি, তা করি।” “অন্য রাজ্যের থেকে আমাদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আলাদা। ওঁদের অনেক শর্ত থাকে।”

বাজেটে মহিলাদের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের পাশাপাশি, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের জন্য ১২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৯ কোটি পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া, বাংলার পিঁয়াজ উৎপাদন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে ৭৫ শতাংশ পিঁয়াজ উৎপাদন হয়, যা সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ।

বাজেটে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে নদীবন্ধন প্রকল্প, যা বিভিন্ন নদী এবং জলাশয়ের মধ্যে সংযোগ ঘটিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে নজর দেবে। এই প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে, বাংলার বাড়ি প্রকল্পে আরও ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা প্রকল্পের মোট বরাদ্দকে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাবে। আগামী বছর এই প্রকল্পে ১৬ লক্ষ বাড়ি তৈরি করা হবে।

পথশ্রী প্রকল্পে ৩৭ হাজার কোটি টাকার সঙ্গে আরও ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গঙ্গাসাগর সেতু নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি টাকা এবং ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই প্ল্যানটি আগামী দু’বছরের মধ্যে কার্যকর হবে।

বাজেটে ৪ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা ১৮ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা পাবেন, যা পয়লা এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। রাজ্য সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিবর্তে সিএসসিই বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কারণ সিএসসিই একটি স্বশাসিত সংস্থা এবং দিল্লি থেকে এটি বাড়ানো হয়।

এছাড়া, চা শিল্পে কর ছাড়ের মেয়াদ এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে, চা শিল্পে আরও একটি বছর কর ছাড় পাওয়া যাবে। রাজ্য সরকার এই বাজেটে আরও সাড়ে তিনশো সুফল বাংলা স্টলের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।

বাজেট পেশের পর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য সরকারকে দেউলিয়া বলে মন্তব্য করেন এবং অভিযোগ করেন, বাজেটে মহিলাদের জন্য কোনও বরাদ্দ রাখা হয়নি। তবে, মুখ্যমন্ত্রী তার কবিতার মাধ্যমে বাজেট ভাষণ শেষ করেন।

এই বাজেটের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের প্রধান লক্ষ্য ছিল রাজ্য উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তবে, রাজস্ব ঘাটতি মেটানোর জন্য কেন্দ্রের কাছ থেকে আরও সহযোগিতা পাওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকেই।