শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: টাকা ধার করাকে কেন্দ্র করে সামান্য পারিবারিক মনোমালিন্য। তারপরই অভিমানে ঘর ছেড়েছিলেন ছেলে। তার পর কেটে গিয়েথে দীর্ঘ ২৬ বছর৷ না কোনও খোঁজ, না যোগাযোগ৷ একটিবারের জন্যেও ফিরে দেখেননি তিনি। বাবা-মা বারবার খোঁজ করেও সন্তানের কোনও সন্ধান পাননি। পরিবারের অনুরোধ, প্রতিবেশীদের মধ্যস্থতা কোনও কিছুতেই মন গলেনি। কিন্তু যে অভিমান দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে টিকেছিল, সেটাকেই ভেঙে দিল ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন—SIR (Status of Inclusion Request)।
পিংলায় নতুন সংসার
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার দজিপুরে এখন সংসার করেন বছর পঞ্চাশের তরুণ দত্ত। দর্জির কাজের পাশাপাশি কৃষিকাজও করেন। স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তাঁর সাজানো জীবন। কিন্তু তাঁর অতীত লুকিয়ে ছিল উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় সেই বাড়ি, যেখান থেকে তিনি ১৯৯৯ সালে অভিমানে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
তরুণ তখন ধান ভাঙানোর ব্যবসায় যুক্ত। হঠাৎ কয়েকটি ঋণ জমে গেলে বাবা প্রশান্ত দত্ত বকাঝকা করেন। সেটুকুই ছিল বিচ্ছেদের সূচনা। অভিমানে সব ছেড়ে দিল্লি চলে যান তরুণ। সেখানেই সাত-আট বছরের জীবন—দর্জির কাজ শেখা, কারখানায় চাকরি, আর পিংলার এক যুবকের সঙ্গে বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বই তাঁকে টেনে আনে পিংলায়। পরে সেখানে জমি কিনে পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। চোখের পলকে কেটে যায় ১৫-১৬ বছর।
তরুণ নিজেই বলেন, “বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ত। কিন্তু অভিমান ভুলে আর ফেরা হয়নি।” অবশেষে সেই অভিমান ভাঙল এক প্রশাসনিক সূত্রে।
কী ভাবে যোগাযোগ? Voter List Family Reunion
২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তরুণের নাম ছিল হাবড়ার ঠিকানায়। নতুন করে ২০২৫-এর তালিকার এনিউমারেশন ফর্ম আসে পিংলার ঠিকানায়। বাবা চান ছেলের নাম যেন হাবড়ার তালিকাতেই বজায় থাকে। সেই অনুযায়ী তিনি স্থানীয় BLO-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ঐ BLO ফের নাম যাচাই করতে গিয়ে তরুণের নাম ও বাবার নাম ধরে পিংলার BLO-র সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেন। এরপর দুই জেলার ওই দুই BLO-র মাধ্যমেই ২৬ বছর পর মিলল বাবার-ছেলের যোগাযোগ। SIR-এর আপডেট প্রক্রিয়া হয়ে উঠল হারানো ছেলেকে ফিরে পাওয়ার মাধ্যম।
তরুণের কথায়, “হঠাৎই ভোটার তালিকার সূত্রে ফোন পেলাম। বুঝলাম বাবা এখনও আমাকে খুঁজছেন। এত বছর পর… মনটা ভেঙে গেল।”
একদিকে প্রশাসনিক নিয়ম, অন্যদিকে দীর্ঘদিনের অমলিন পারিবারিক টান—অবশেষে একই সুতোয় বাঁধল দু’দিককে। ভোটার তালিকার এই ‘সাধারণ’ প্রক্রিয়া হয়ে উঠল এক পরিবারের কাছে সবচেয়ে বড় পুনর্মিলনের দিন।
