পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় (Election Officers) অস্তিত্বহীন ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্তির গুরুতর অভিযোগে নন্দকুমার এবং রাজারহাট-গোপালপুরের দুই ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও) নির্বাচন কমিশনের স্ক্যানারে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এই দুই ইআরও ভোটার তালিকায় অসঙ্গতির কথা স্বীকার করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে যে, ভোটার তালিকায় ১০২ জনের নাম যাচাই ছাড়াই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। এই ঘটনায় জড়িত ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন, এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে দুই ইআরও-র বিরুদ্ধে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে নালিশ দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
অভিযোগের বিস্তারিত
নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, নন্দকুমার এবং রাজারহাট-গোপালপুরের ইআরও-রা ভোটার তালিকা প্রস্তুতির সময় নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি। নিয়ম অনুযায়ী, ভোটার তালিকায় নতুন নাম যোগ করার আগে বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) মাধ্যমে তথ্য যাচাই করা বাধ্যতামূলক।
কিন্তু অভিযোগ, এই দুই ইআরও তথ্য যাচাইয়ের জন্য বিএলও-দের কাছে কোনো তথ্য পাঠাননি। তারপরও, ১০২ জনের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা সন্দেহজনক এবং নির্বাচনী নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এই অসঙ্গতি ধরা পড়ে যখন নির্বাচন কমিশন নমুনা পরীক্ষার সময় ভোটার তালিকায় অস্তিত্বহীন ব্যক্তিদের নাম চিহ্নিত করে। এই ঘটনায় কমিশনের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক গতকাল দুই ইআরও-কে তলব করেন এবং তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেন।
নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ
নির্বাচন কমিশন এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে দুই ইআরও-র বিরুদ্ধে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে নালিশ দায়ের করা হয়েছে। কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করা তাদের প্রধান দায়িত্ব।
এই ধরনের অসঙ্গতি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন করতে পারে, তাই এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কমিশন আরও জানিয়েছে, ভোটার তালিকায় নাম যোগ বা বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও) ভোটার তালিকা প্রস্তুতি ও সংশোধনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে নতুন ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্তি, বিদ্যমান নাম সংশোধন এবং অস্তিত্বহীন বা মৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া। এই প্রক্রিয়ায় বিএলও-দের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করা একটি অপরিহার্য ধাপ। কিন্তু নন্দকুমার ও রাজারহাট-গোপালপুরের ইআরও-রা এই নিয়ম মানেননি বলে অভিযোগ। এই ঘটনা প্রশ্ন তুলেছে যে, কীভাবে এবং কেন এই ১০২ জনের নাম তথ্য যাচাই ছাড়াই তালিকায় স্থান পেল।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই অসঙ্গতিকে “গণতন্ত্রের উপর আঘাত” হিসেবে অভিহিত করেছে। বিজেপির মুখপাত্র দাবি করেছেন, এই ধরনের অনিয়ম রাজ্যের শাসক দলের প্রভাবে ঘটছে, এবং এটি আসন্ন নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা কারচুপির একটি প্রচেষ্টা হতে পারে।
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে। তাঁরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করছে এবং এই ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জনগণের মধ্যে উদ্বেগ
ভোটার তালিকায় অসঙ্গতির এই ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, যদি বিএলও-দের মাধ্যমে তথ্য যাচাই না হয়, তাহলে কীভাবে এই নামগুলো তালিকায় এল? এই ঘটনা ভোটার তালিকার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করছেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কমিশনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
জামিলের আগমনে ব্লু টাইগার্সদের খেলায় আসবে এই তিন পরিবর্তন!
নির্বাচন কমিশনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটার তালিকার নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে তারা নিয়মিত নমুনা পরীক্ষা চালিয়ে যাবে। এই ঘটনার পর কমিশন রাজ্যের অন্যান্য এলাকায়ও ভোটার তালিকার যাচাই প্রক্রিয়া জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া, ইআরও এবং বিএলও-দের জন্য আরও কঠোর প্রশিক্ষণ এবং তদারকির ব্যবস্থা করা হবে। কমিশনের লক্ষ্য হল আসন্ন নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকাকে সম্পূর্ণ নির্ভুল ও স্বচ্ছ করা।
নন্দকুমার ও রাজারহাট-গোপালপুরের ভোটার তালিকায় অসঙ্গতির এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপর একটি কালো দাগ ফেলেছে। দুই ইআরও-র বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এবং ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। এই ঘটনা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধে নির্বাচন কমিশনের তৎপরতা এবং কঠোর তদারকি অত্যন্ত জরুরি।