Medinipur College clash: মেদিনীপুর কলেজে এসএফআই বনাম টিএমসিপি ব্যাপক সংঘর্ষ

মেদিনীপুর কলেজে (Medinipur College) সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ও সংঘর্ষে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বাম ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্টস ফেডারেশন…

SFI and TMCP at Medinipur College Sparks Tension

short-samachar

মেদিনীপুর কলেজে (Medinipur College) সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ও সংঘর্ষে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বাম ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (এসএফআই)-এর বিক্ষোভের ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল এসএফআই।

   

এই ঘটনার সূত্র ধরে মেদিনীপুর কলেজের প্রধান ফটকে সোমবার সকাল দশটা নাগাদ এসএফআই সমর্থকরা অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করে। কিন্তু তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-র জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের নেতৃত্বে টিএমসিপি-র বেশ কিছু সমর্থক ও বহিরাগত ছাত্র কলেজে জোর করে প্রবেশের চেষ্টা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর দুপক্ষের মধ্যে মুখোমুখি বাকবিতণ্ডা থেকে হাতাহাতি শুরু হয়, যা এক পর্যায়ে ব্যাপক সংঘর্ষে রূপ নেয়। এই ঘটনায় দুপক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

যাদবপুরের ঘটনা থেকে মেদিনীপুরের সংঘর্ষ
এই সংঘর্ষের পটভূমি গড়ে উঠেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে এসএফআই-এর ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সেখানে শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভের সময় তীব্র বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এসএফআই-এর অভিযোগ, একজন ছাত্র শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির চাকার নীচে শুয়ে পড়লে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে এসএফআই রাজ্যের প্রতিটি জেলায় বিক্ষোভ ও ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে মেদিনীপুর কলেজে এসএফআই সমর্থকরা প্রধান ফটকের সামনে পিকেটিং শুরু করে, যাতে কোনো ছাত্র-ছাত্রী কলেজে প্রবেশ করতে না পারে। এই অবস্থানকে কেন্দ্র করেই টিএমসিপি-র সঙ্গে সংঘাতের সূত্রপাত হয়।

মেদিনীপুর কলেজে সংঘর্ষের বিবরণ
সোমবার সকালে এসএফআই-এর সমর্থকরা মেদিনীপুর কলেজের প্রধান ফটক বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এসএফআই-এর দাবি, তাদের এই কর্মসূচি শিক্ষা ব্যবস্থার উপর সরকারের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। কিন্তু টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের নেতৃত্বে তাদের সমর্থক ও বেশ কিছু বহিরাগত ছাত্র কলেজে প্রবেশের জন্য ফটকের দিকে এগিয়ে আসে। এসএফআই-এর অভিযোগ, টিএমসিপি জোর করে ফটক খোলার চেষ্টা করে এবং তাদের ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথমে দুপক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এসএফআই জানায়, তারা জিজ্ঞাসা করেছিল কেন মূল ফটক বন্ধ করা হয়েছে, আর টিএমসিপি-র পক্ষ থেকে এর উত্তরে আক্রমণাত্মক আচরণ করা হয়।

কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। দুপক্ষের সমর্থকরা মুখোমুখি হয়ে হাতাহাতি শুরু করে। এসএফআই-এর অভিযোগ, টিএমসিপি-র বহিরাগত সমর্থকরা তাদের উপর আক্রমণ করে। অন্যদিকে, টিএমসিপি দাবি করে যে, এসএফআই ফটক বন্ধ করে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করছে। এই সংঘর্ষে দুপক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, টিএমসিপি কর্মীরা কয়েকজন এসএফআই সমর্থককে টেনে-হিঁচড়ে বের করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরা জানান, সংঘর্ষের সময় চিৎকার ও হট্টগোলের মধ্যে পরিস্থিতি একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

পুলিশের হস্তক্ষেপ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ
সংঘর্ষের খবর পেয়ে মেদিনীপুর থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বেলা বারোটা নাগাদ পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসএফআই-এর কয়েকজন সমর্থককে আটক করা হয় বলে জানা গেছে। পরে মেদিনীপুর কলেজের সামনে পুলিশ পিকেট বসানো হয়, যাতে আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, “আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছিল, কিন্তু এখন সব শান্ত। আমরা তদন্ত করে দেখছি কীভাবে এই ঘটনা ঘটল।”

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ
মেদিনীপুর কলেজের ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়ে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেও বাম ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল প্রদর্শন করা হয়। এসএফআই-এর নেতৃত্বে ছাত্র-ছাত্রীরা যাদবপুরের ঘটনার প্রতিবাদে সরব হন। তারা শিক্ষা ব্যবস্থার উপর সরকারি হস্তক্ষেপ এবং শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই বিক্ষোভের সময় কঠোর নজরদারি রাখে, যাতে কোনো সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি না হয়।

দুপক্ষের প্রতিক্রিয়া
এসএফআই-এর জেলা সম্পাদক জানান, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিলাম। টিএমসিপি-র বহিরাগতরা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। এটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।” অপরদিকে, টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “এসএফআই ফটক বন্ধ করে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করছে। আমরা শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের কলেজে ঢোকার অধিকার রক্ষা করতে এসেছিলাম। তারা আমাদের উপর আক্রমণ করেছে।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
এই সংঘর্ষ বাংলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের একটি নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। এসএফআই ও টিএমসিপি-র মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই ঘটনায় প্রকাশ্যে এসেছে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে চায়, সেখানে এসএফআই সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে তাদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছে। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও তীব্র করেছে।

মেদিনীপুর কলেজে এসএফআই ও টিএমসিপি-র মধ্যে এই সংঘর্ষ শুধু একটি স্থানীয় ঘটনা নয়, বরং রাজ্যের শিক্ষা ও রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতির প্রতিফলন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও এই ঘটনার রেশ সহজে মিলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আগামী দিনে এই বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের প্রভাব কীভাবে রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্রে পড়বে, তা দেখার বিষয়।