মহেশতলা: দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রনগর এলাকায় বুধবার বিকেলের দিকে এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে (Mentally unstable man) মারধরকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। স্থানীয় আলমপুর মাদ্রাসা পাড়া ও কুদ্দুস পাড়ার মধ্যে শুরু হয় তীব্র বচসা, যা পরবর্তীতে রণক্ষেত্রের রূপ নেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক ব্যক্তি যিনি মানসিক ভারসাম্যহীন, তিনি হঠাৎ করেই এলাকার এক মহিলার হাত ধরেন। এই দৃশ্য দেখে কিছু স্থানীয় যুবক তাঁকে ধরে মারধর শুরু করে। তখনই পাশের পাড়ার কিছু মানুষ এসে ওই ব্যক্তিকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই দুই পাড়ার মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ। মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং শুরু হয় ইট-পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি।
দুই পাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ধরে ইটবৃষ্টি চলতে থাকে। রাস্তায় ভাঙা কাঁচ ও ইটের টুকরো ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। ঘটনায় অন্তত কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে, তাঁদের স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় রবীন্দ্রনগর থানার পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ না করলেও উভয় পক্ষকে সতর্ক করে শান্ত থাকার নির্দেশ দেয়। ধীরে ধীরে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হলেও এলাকায় টানটান উত্তেজনা বজায় রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর কয়েকজনকে গ্রেফতার করে শুক্রবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ইট, লাঠি ও ভাঙা বোতল উদ্ধার করেছে পুলিশ। বর্তমানে গোটা এলাকায় টহল জারি রয়েছে এবং পুলিশ পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে।
একজন সিনিয়র পুলিশ আধিকারিক বলেন, “ঘটনাটি মূলত এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থেকে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা দোষীদের চিহ্নিত করছি। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলে কাউকে ছাড়া হবে না।”
এদিকে স্থানীয়রা জানান, ইটবৃষ্টির সময় মহিলারা ও শিশুরা বিশেষভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেক পরিবার আশ্রয় নেন আত্মীয়দের বাড়িতে। ঘটনার পর থেকেই এলাকায় টহলদারি বাড়ানো হয়েছে এবং মহেশতলা পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে যান।
স্থানীয় সমাজকর্মীরা বলেন, “মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের নিয়ে সমাজে এখনো যে অজ্ঞতা আছে, সেটাই এই ঘটনার মূল কারণ। প্রশাসনের উচিত সচেতনতা বাড়ানো ও এমন ব্যক্তিদের জন্য নিরাপদ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।”
বর্তমানে রবীন্দ্রনগর ও আশপাশের এলাকা জুড়ে পরিস্থিতি শান্ত হলেও এখনও থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। পুলিশ দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিচ্ছে।