মিলন পণ্ডা, চণ্ডীপুর: দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অবহেলিত এক কিলোমিটার রাস্তা। বর্ষার সময় যেন আরও বিভীষিকা হয়ে ওঠে। সেই দুর্ভোগে ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তার উপর বাঁশের বেড়া দিয়ে যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুর ১ নম্বর ব্লকের গুড়গ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুর গ্রামের শতাধিক গ্রামবাসী (Villagers Protest)।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার গ্রামবাসীরা গুড়গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস ঘেরাও করে প্রবল বিক্ষোভ দেখান। রাস্তার বেহাল দশার প্রতিবাদে পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে প্রশাসনের একাধিক স্তরে অভিযোগ জানিয়েও মেলেনি কোনও সুরাহা, এমনটাই অভিযোগ তাঁদের। গ্রামবাসীদের দাবি, প্রশাসনের আধিকারিকরা এলাকায় না এলে কোনওভাবেই রাস্তার উপর থেকে বেড়া তোলা হবে না।
এই বিষয়ে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও ধীরে ধীরে সামনে আসছে। বিরোধী দল বিজেপি এই ঘটনার তীব্র কটাক্ষ করেছে। চণ্ডীপুর বিধানসভা বিজেপি আহ্বায়ক সূর্যকান্ত বাগ বলেন, “গুড়গ্রাম পঞ্চায়েতের বহু রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না, রোগীরা অ্যাম্বুলেন্সে চড়তে পারে না। অথচ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে পঞ্চায়েত অফিসে এসি বসানো হয়েছে। এটা জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা। মানুষ ন্যায্য আন্দোলন করছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপালপুরে একটি জুনিয়র হাই স্কুল রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার করুণ অবস্থার কারণে বহু ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এক ছাত্রী জানান, “স্কুলে যাওয়ার সময় রাস্তায় পিছলে পড়ে যাই। এখন এক সপ্তাহ ধরে যেতে পারিনি। এই রাস্তাটা ঠিক না হলে কীভাবে পড়াশোনা করব?”
আর এক অভিভাবক বলেন, “আমার মেয়ে গোপীনাথপুর বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। প্রতিদিন ভয় নিয়ে স্কুলে পাঠাতে হয়। রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থেকেই যায়।”
গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন, গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রিন্টু রানার কাছে বারবার আবেদন জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ রেখে আন্দোলন চালিয়ে যান তাঁরা। সেই সময় প্রধান পঞ্চায়েত অফিসে উপস্থিত থাকলেও তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। এমনকি তাঁকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এই বিষয়ে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে কোনও মন্তব্য মেলেনি। যদিও গুড়গ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এবং চণ্ডীপুর বিধানসভা — উভয়ই বর্তমানে তৃণমূলের দখলে। চণ্ডীপুর কেন্দ্র থেকে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী তথা অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী।
এমন অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, জননেতাদের প্রতিশ্রুতি কি শুধুই নির্বাচনের আগে? নির্বাচনের পর সেই প্রতিশ্রুতি কি পিচ্ছিল কাঁচা রাস্তার মতোই হারিয়ে যায়? এ প্রশ্নেই উত্তাল গোপালপুর, আর তার প্রতিবাদে সরব জনতা।