তৃণমূল অফিসে মদ্যপ দৌরাত্ম্যে গ্রামবাসীর বিক্ষোভ

খেজুরি: তৃণমূলের দলীয় অফিসে গভীর রাত পর্যন্ত মদ্যপদের দাপাদাপি ও সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগে উত্তাল পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি। শুক্রবার সন্ধ্যায় শতাধিক গ্রামবাসী (Villagers Protest) একজোট হয়ে…

তৃণমূল অফিসে মদ্যপ দৌরাত্ম্যে গ্রামবাসীর বিক্ষোভ

খেজুরি: তৃণমূলের দলীয় অফিসে গভীর রাত পর্যন্ত মদ্যপদের দাপাদাপি ও সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগে উত্তাল পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি। শুক্রবার সন্ধ্যায় শতাধিক গ্রামবাসী (Villagers Protest) একজোট হয়ে কাঁথি সাংগঠনিক জেলার যুব তৃণমূল সভাপতি ও খেজুরি ১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জালাল উদ্দিন খাঁনের অফিস ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খেজুরি ১ ব্লকের হেঁড়িয়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের পিছনে অবস্থিত এই তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়। বহুদিন ধরে এই অফিসে গভীর রাত পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি মদ ও মাংসের আসর বসতো বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের দাবি, প্রতিদিন রাত গভীর হওয়া পর্যন্ত হৈ-হুল্লোড় চলতো, যার ফলে এলাকার মহিলারা ভয় পেতেন রাস্তায় বের হতে। শুধু তাই নয়, নারীদের উদ্দেশে কটূক্তি করা হতো বলেও অভিযোগ ওঠে।

   

শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রামের দলমত নির্বিশেষে মানুষজন মিছিল করে অফিস ঘেরাও করে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন গ্রামের মহিলা ও প্রবীণ বাসিন্দারা। তারা একসঙ্গে স্লোগান তুলে অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি করেন। ঘটনাস্থলে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে হেঁড়িয়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে শান্ত করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিক্ষোভকারী নারায়ণ মান্না বলেন, “আমাদের গ্রামের মধ্যে জালাল বাবু অবৈধভাবে অফিস করেছেন। দিনের পর দিন গভীর রাত পর্যন্ত মদ্যপরা দাপিয়ে বেড়াত। এই কারণে আমরা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিক্ষোভ করেছি। পুলিশের উপস্থিতিতে জালাল বাবু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অফিসের কাগজপত্র দেখাবেন। তা না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।”

গ্রামবাসীদের এই প্রতিবাদে সমর্থন জানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্বরা। কাঁথি সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সহ-সভাপতি তাপস দলাই বলেন, “সরকারি জায়গা জবরদখল করে তৃণমূলের অফিস গড়ে তোলা হয়েছে। অফিসের ভেতরে মদ ও মাংসের আসর বসত। জালাল উদ্দিন খাঁনের নেতৃত্বে এমন অসামাজিক কাজ চলত। মহিলারা সন্ধ্যায় রাস্তা দিয়ে বের হতে সাহস পেতেন না। গ্রামবাসীরা তাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভ করেছে।”

Advertisements

যদিও এই সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন জালাল উদ্দিন খাঁন। তিনি দাবি করেছেন, “আমার অফিসের সামনে ঘটনাটি ঘটেছে, ভেতরে নয়। দু’জন মদ্যপের মধ্যে গণ্ডগোলের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে আমার বা আমার দলের কোনো যোগ নেই।”

এলাকায় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বিরোধীরা রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে বিষয়টি অতিরঞ্জিত করছে। অন্যদিকে বিজেপি অভিযোগ করছে, শাসকদলের নেতাদের মদ্যপান ও অসামাজিক কার্যকলাপের কারণে গ্রামবাসীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

স্থানীয়দের বক্তব্য, তারা আর শান্ত হয়ে বসে থাকতে রাজি নন। যদি প্রতিশ্রুতিমতো কাগজপত্র দেখানো না হয় এবং অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ না হয়, তবে আগামী দিনে আরও বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। খেজুরির এই ঘটনা প্রমাণ করছে যে গ্রামীণ স্তরে রাজনৈতিক দলের কার্যালয়কে ঘিরে অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে মানুষ এখন সরব হতে শুরু করেছে।