তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতে দুর্নীতির অভিযোগ, প্রধানকে ঘিরে বিক্ষোভ

মিলন পণ্ডা, এগরা: তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের (TMC Panchayat) বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে প্রধানকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখালেন শতাধিক স্থানীয়…

তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতে দুর্নীতির অভিযোগ, প্রধানকে ঘিরে বিক্ষোভ

মিলন পণ্ডা, এগরা: তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের (TMC Panchayat) বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে প্রধানকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখালেন শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দা। ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা ২ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত বাসুদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রধান অরূপ মাইতির নেতৃত্বাধীন পঞ্চায়েতে সরকারি আবাস যোজনা, পুরনো বিল্ডিং সংস্কার, আবর্জনা পরিবহণ—প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতির ছাপ স্পষ্ট। এদিন গ্রামবাসীরা প্রধানের ঘরে চুকে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। মেজাজ হারিয়ে পড়েন পঞ্চায়েত প্রধান নিজেই। শুরু হয় তীব্র বাকবিতণ্ডা।

   

এক মহিলার অভিযোগ, “আমার বাড়ি আবাস যোজনায় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ১০ হাজার টাকা কাটমানি দিতে হয়েছে। এখনো শৌচালয় পাইনি।” এমন আরও অনেকেই অভিযোগ করেন, যাঁরা প্রকৃতপক্ষে সরকারি সুবিধার যোগ্য, তাঁদের বাদ দিয়ে টাকা নিয়ে অন্যদের ঘর দেওয়া হয়েছে।

গ্রামবাসীরা আরও জানান, পুরনো একটি ভবনকে নতুন ভবন বলে দেখিয়ে সরকারি অর্থ তুলে নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া, পঞ্চায়েতের আবর্জনা ফেলার জন্য কেনা দুটি সরকারি টোটো ব্যক্তিগত ব্যবহারে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। একজন টোটো চালক বলেন, “এই টোটোটা পঞ্চায়েতের। এখন অন্য লোকের মালসামান সরবরাহে ব্যবহার করি। পঞ্চায়েতকে মাসে ৩ হাজার টাকা ভাড়া দিই।”

এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অরূপ মাইতি। তিনি বলেন, “সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। সরকারি নিয়ম মেনেই সমস্ত কাজ হয়েছে। কোনও টেন্ডারে বাইরের লোক নয়, স্থানীয়দেরই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কেউ অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে জানাক, বিডিও অফিসেও জানাতে পারে।”

Advertisements

প্রধানের সাফাই সত্ত্বেও, স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। বিজেপি নেতা শচীন সিহনা বলেন, “এই পঞ্চায়েতে দুর্নীতি নিত্যদিনের ব্যাপার। সরকারি প্রকল্পে কাটমানি, টেন্ডারে স্বজনপোষণ, পানীয় জল সমস্যার সমাধান নেই। মানুষ তিতিবিরক্ত।”

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাসুদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়লাভ করে। সেই সময় থেকেই প্রধান অরূপ মাইতির বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যদিও এদিনের ঘটনার পরে গোটা এলাকায় রাজনৈতিক চাঞ্চল্য ছড়ায়।

স্থানীয়রা জানান, এবার তাঁরা আর চুপ করে থাকতে রাজি নন। সরকারি দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক তদন্তের দাবি জানিয়ে বিডিও অফিসে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।

গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে সরকারি প্রকল্প নিয়ে এই ধরনের অভিযোগ শুধু বাসুদেবপুর নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই উঠে আসছে। প্রশাসন যদি সময়মতো তদন্ত না করে, তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থা আরও কমে যাবে বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।