শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: বিপ্লবীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা দিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হওয়া প্রশ্নপত্র ঘিরে অবশেষে মুখ খুললেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vidyasagar University) উপাচার্য অধ্যাপক দীপক কুমার কর। তিনি জানান, স্নাতক স্তরের তৃতীয় বর্ষের ইতিহাস প্রশ্নপত্রে যাঁদের নাম সংশ্লিষ্ট হিসেবে ছিল— UG বোর্ড অফ স্টাডিজের চেয়ারম্যান এবং মডারেশন বোর্ডের এক সদস্যকে পদ থেকে সরানো হয়েছে। তাঁদের জায়গায় নিয়োগ করা হয়েছে দুই সিনিয়র অধ্যাপককে।
উপাচার্যের প্রতিক্রিয়া
“এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল, তবে ক্ষমার অযোগ্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে লজ্জিত ও আহত,” বলেছেন উপাচার্য দীপক কর। তিনি আরও বলেন, “টাইপোগ্রাফিক্যাল ভুল বা বঙ্গানুবাদের অসতর্কতার ফলেই প্রশ্নে বিপ্লবীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলা হয়েছে। আমরা সবার কাছে, বিশেষত দেশপ্রেমী মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”
কী কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো?
সকাল ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vidyasagar University) সমস্ত বিভাগের বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে দুঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক করেন উপাচার্য। বৈঠক শেষে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়:
ইতিহাস প্রশ্নপত্রে ত্রুটির দায়ে দুই অধ্যাপককে অব্যাহতি।
“ঔপনিবেশিক” বা “কলোনিয়াল” শব্দ প্রয়োগ যেন প্রশ্নপত্রে না হয়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ।
সিলেবাস সংস্কারে নজর দেওয়া হবে, যাতে বিতর্কিত বা ভুল ব্যাখ্যা করা শব্দ ছাত্রছাত্রীরা না পড়ে।
প্রয়োজনে, যে সমস্ত রেফারেন্স বইতে এমন শব্দ আছে, সেগুলি বাতিলেরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
প্রশ্নের শব্দভ্রষ্ট বঙ্গানুবাদ সংক্রান্ত বিষয়টি রিভিউ করে নতুন সিদ্ধান্ত নেবেন পরীক্ষা নিয়ামক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায় স্বীকার
রেজিস্ট্রার জয়ন্ত কিশোর নন্দী, কন্ট্রোলার বিপ্লব চক্রবর্ত্তী এবং ডিন অরিন্দম গুপ্ত সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। উপাচার্য বলেন, “মেদিনীপুরের বিপ্লবীদের ইতিহাস অমূল্য। এই জেলার ছাত্রদের সামনে যদি ভুল বার্তা যায়, তা ইতিহাসকে অসম্মান করা হবে।”
তিনি যোগ করেন, “এই ভুলকে সাধারণ ভুল হিসেবে নিচ্ছি না, বরং অতিমাত্রায় গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। ইতিহাসে এমন শব্দের প্রয়োগে আমাদের আরো সংবেদনশীল হতে হবে।”
প্রসঙ্গত, প্রশ্ন ছিল: “মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর নাম লিখুন, যারা সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নিহত হন।” এই প্রশ্নে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী বিপ্লবীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলা হয়েছে, এমনই অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়।
উপাচার্যের প্রকাশ্য ক্ষমা ও দায় স্বীকারের মধ্য দিয়েই বোঝা যাচ্ছে, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় এই ঘটনায় নিজেদের দায় এড়াতে চাইছে না। প্রতিষ্ঠান নিজের ভুল মেনে নিয়ে সংস্কারের পথে হাঁটছে, এটাই শিক্ষাজগতের জন্য ইতিবাচক বার্তা। তবে ভবিষ্যতে যাতে এমন বিতর্কিত ও অসম্মানজনক শব্দ আর কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে না আসে, তার জন্য যথাযথ নজরদারি প্রয়োজন— এমনটাই মনে করছেন শিক্ষামহলের অনেকে।