বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ISRO-র সহায়তায় রেডিয়োসন্ড বেলুন উৎক্ষেপণ

শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গর্ব বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় এবার রচনা করল আবহাওয়া বিজ্ঞান ও গবেষণার এক নতুন অধ্যায়। দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (ISRO)-র সহযোগিতায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথমবার আকাশে পাঠানো হলো হিলিয়াম গ্যাসভর্তি এক বিশাল বেলুন, যাতে সংযুক্ত ছিল জিপিএস পরিচালিত রেডিয়োসন্ড—a cutting-edge আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিমাপক যন্ত্র।

Advertisements

এই উচ্চপ্রযুক্তির বেলুনটি স্থানীয় সময় বিকেল ৩টে ৫৩ মিনিট ৩ সেকেন্ডে আকাশে ওড়ে এবং ক্রমশ উঠে যায় প্রায় ২৭.৮৩১ কিলোমিটার উচ্চতায়। এই অসাধারণ অভিযানের মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে সংগ্রহ করা হয় বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুর চাপ, গতিবেগ এবং গতিবিধির বিশ্লেষণাত্মক তথ্য।

   

ভৌগোলিক বিস্তার ও প্রযুক্তির সক্ষমতা
এই রেডিয়োসন্ড বেলুনটি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭৪.৮৬ কিমি রৈখিক দূরত্ব পেরিয়ে বিকেল ৩টে ৫৩ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার গুরাবাঁধা নামক এক গভীর বনাঞ্চলে অবতরণ করে। বেলুনটি পুরো সময়কাল ধরে প্রতি সেকেন্ডে সুনির্দিষ্ট GPS লোকেশন পাঠাতে সক্ষম ছিল, যা গবেষকদের কাছে বিশ্লেষণের জন্য এক অমূল্য সম্পদ।

উদ্দেশ্য ও গবেষণার তাৎপর্য
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল আঞ্চলিক ও স্থানীয় স্তরে বায়ুমণ্ডলের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা এবং ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত পূর্বাভাসকে আরও নির্ভুল করে তোলা। পাশাপাশি, উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যের সঙ্গে বাস্তব ভিত্তিক তথ্য মিলিয়ে দেখা—যাকে বলে ground truth validation।

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের ডিরেক্টর অধ্যাপক যতিশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই বেলুন প্রোজেক্টটি আমাদের গবেষণার একটি মাইলস্টোন। এত উচ্চতায় ওঠা বেলুন থেকে বায়ুমণ্ডলের যে বিশ্লেষণী তথ্য আমরা সংগ্রহ করেছি, তা পশ্চিমবঙ্গ তথা পূর্বাঞ্চলের আবহাওয়া গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।”

Advertisements

ইসরো-র সহযোগিতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইসরো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ প্রয়াসে এই উদ্যোগ সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা। ভবিষ্যতে এমন আরও বেলুন পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে, যার মাধ্যমে আলাদা ঋতুতে বায়ুমণ্ডলের চরিত্রগত পরিবর্তন পর্যালোচনা করা যাবে। বিশেষ করে পশ্চিম মেদিনীপুর অঞ্চলে খরা, অকাল বৃষ্টি এবং চাষাবাদের উপর জলবায়ুর প্রভাব বিশ্লেষণে এই ধরনের তথ্যভান্ডার অত্যন্ত কার্যকরী।

এই গবেষণা শুধু একাডেমিক ক্ষেত্রেই নয়, পশ্চিমবঙ্গের কৃষি, দুর্যোগ পূর্বাভাস এবং পরিবেশ নীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখতে চলেছে। স্থানীয় স্তরে তৈরি এই প্রযুক্তি ও তথ্যভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য অনেকটাই আশার আলো দেখায়।

এইভাবে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসরো একসঙ্গে বাঙালির বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে এক নতুন পালক যোগ করলো।