বাংলা ভোটার লিস্টে চমক! UIDAI শনাক্ত করল ৪৭ লক্ষ ‘মৃত’ রেকর্ড

UIDAI ,West Bengal,Voter List ,Election Commission

পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা নিয়ে বিস্ময়কর তথ্য সামনে আনল ভারতীয় বিশেষ পরিচয় প্রাধিকার সংস্থা UIDAI। নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে, রাজ্যে ৩৪ লক্ষ আধারধারী ব্যক্তিকে ‘মৃত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আরও ১৩ লক্ষ ব্যক্তি যারা কখনোই আধার কার্ড তৈরি করেননি, তারাও ‘মৃত’ হিসেবে নথিভুক্ত রয়েছেন।

Advertisements

মোট মিলিয়ে ৪৭ লক্ষ মৃত বা অবৈধ রেকর্ড—যা ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েনি। নির্বাচন কমিশন বলছে, এই বিশাল তথ্যভাণ্ডার এখন রাজ্যের ভোটার লিস্ট পরিষ্কার করতে বড় ভূমিকা নেবে।

   

🔍 ৩৪ লক্ষ আধার নম্বরধারী কেন ‘মৃত’?

UIDAI তাদের ডাটাবেসে যেসব আধার হোল্ডারদের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে বা সরকারি নথিতে রিপোর্ট করা হয়েছে, তাদের “Deceased” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

কিন্তু দেখা গেছে—এই মৃত ব্যক্তিদের অনেকেই এখনও পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় সক্রিয় হিসেবে থেকে গেছেন

এক UIDAI কর্মকর্তা জানান—

“আধার আপডেট করার সময় বহু পরিবার মৃত্যুসংক্রান্ত সার্টিফিকেট দিয়েছে। সরকারি নথির ভিত্তিতেই এই ৩৪ লক্ষ নাম মৃত হিসেবে ট্যাগ করা।”

কিন্তু সমস্যা হলো—ভোটার লিস্টে এই আপডেট পৌঁছয়নি। এর ফলে বহু বছরের জমে থাকা মৃত ভোটারদের নাম তালিকায় রয়ে গেছে।

⚠️ ১৩ লক্ষ ‘মৃত’ যাদের আধারই নেই — বড় রহস্য

এই অংশটাই সবচেয়ে বিস্ময়কর।

UIDAI জানিয়েছে—

“১৩ লক্ষ মানুষ যাদের কখনোই আধার ছিল না, তাদেরও সরকারি রেকর্ডে মৃত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।”

এরা সম্ভবত—

  • পুরনো জনস্বাস্থ্য ও নাগরিক রেকর্ডে মৃত

  • কিন্তু নির্বাচনী তালিকা বা পরিবার নথিতে বিচ্ছিন্ন

  • বহু ক্ষেত্রে নকল বা অস্তিত্ববিহীন পরিচয়

  • অথবা প্রশাসনিক ত্রুটির ফল

নির্বাচন কমিশন বলছে, এই অংশটি খুব সংবেদনশীল। নথি যাচাই না করে কোনো নাম বাদ দেওয়া হবে না।

🗳️ রাজ্যের ভোটার লিস্টে প্রভাব কতটা?

যদি ৪৭ লক্ষ মৃত বা ডুপ্লিকেট রেকর্ড ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে, তাহলে—

  • রাজ্যের মোট ভোটার সংখ্যা ৪-৫% কমে যেতে পারে

  • বহু কেন্দ্রে ভোটার-সংখ্যার ভারসাম্য বদলে যাবে

  • ভুয়ো পরিচয়, ডুপ্লিকেট ভোট, মৃত ভোটার—এসবের ব্যবহার রোধ হবে

  • ভবিষ্যৎ নির্বাচনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে

এক নির্বাচনী কর্মকর্তা বলেন—

“এটি গত দশকের সবচেয়ে বড় ভোটার তালিকা পরিষ্কার অভিযান হতে চলেছে।”

🏛️ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: স্বাভাবিকভাবেই মেরুকরণ

ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বিজেপির অভিযোগ:

Advertisements

“এটাই প্রমাণ করে যে দীর্ঘদিন ধরে ভোটার লিস্টে মৃত ও নকল নাম রাখা হয়েছে। এখন পরিষ্কার হলে প্রকৃত ছবি প্রকাশ পাবে।”

তৃণমূলের বক্তব্য:

“এটি শুধুই প্রশাসনিক আপডেট। বিরোধীরা অকারণে রাজনীতি করছে।”

বিশ্লেষকদের মতে—এটি একটি ডেটা মিস-ম্যাচ সমস্যা, যা প্রশাসনিক সমন্বয় না থাকলে আরও বড় হতে পারে।

🧭 এখন কী হবে? — তিন ধাপের বড় অভিযান

নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই তিনটি ধাপে পরিকল্পনা করেছে—

UIDAI ডেটা বনাম ভোটার লিস্ট মিলিয়ে দেখা

প্রতিটি নাম যাচাই করা হবে।

2️⃣ বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা

ব্লক লেভেলে যাচাই করে দেখা হবে—

  • ব্যক্তি সত্যিই মৃত কিনা

  • পরিবারে কেউ তথ্য ভুল দিয়েছে কিনা

3️⃣ ভোটার তালিকা সংশোধন ও বাদ দেওয়া

প্রমাণ মিললে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ।

এটি হতে পারে পশ্চিমবঙ্গে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ডেটা-ভোটার অডিট।

🧠 কেন এত বড় গড়মিল হল?

ডেটা বিশেষজ্ঞদের মতে—

  • আধার ডেটাবেস ও ভোটার ডেটাবেস সম্পূর্ণ আলাদা

  • উভয়ের সঙ্গে পরিবারের দেওয়া তথ্যের অসামঞ্জস্য

  • বহু গ্রামীণ পরিবারে মৃত্যু রিপোর্ট না করা

  • কিছু ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত ভুল তথ্য

  • এবং সবচেয়ে বড়—দীর্ঘদিন লিস্ট আপডেট না হওয়া

এই অবস্থায় UIDAI-এর ডাটাবেস নির্বাচন কমিশনকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।

UIDAI–র এই ৪৭ লক্ষ মৃত/অবৈধ রেকর্ডের তথ্য প্রকাশের ফলে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে।

পরিষ্কার ভোটার তালিকা মানে—

  • আরও স্বচ্ছ নির্বাচন

  • নকল ভোট কমবে

  • এবং প্রকৃত জনগণই ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

এখন নজর সবই নির্বাচন কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপে।