উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লকের মালিদা গ্রামে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে (Drugging Family)। গ্রামের বাসিন্দা আরিফ মোল্লার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি দুই ভাইয়ের স্ত্রী ও এক কন্যাসন্তানকে নিয়ে পালিয়েছেন। এই ঘটনায় আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হল, পালানোর আগে আরিফ কৌশলে চায়ের সঙ্গে বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে পরিবারের বাকি সদস্যদের অচেতন করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
ঘটনাটি ঘিরে মঙ্গলবার বাগদা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার এবং অভিযুক্ত আরিফের স্ত্রী সোনিয়া মোল্লা অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, মালিদা গ্রামের বাসিন্দা ইয়াসিন শেখ এবং তাঁর ভাই আনিসুর শেখের স্ত্রীদের সঙ্গে আরিফ মোল্লার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ।
ইয়াসিনের স্ত্রী কুলচান মল্লিক এবং আনিসুরের স্ত্রী নাজমা মণ্ডলের সঙ্গে আরিফের এই সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল। সোমবার সন্ধ্যায় আনিসুর গ্যারেজের কাজ সেরে বাড়ি ফিরে দেখেন তাঁর বাবা-মা এবং তিন কন্যাসন্তান অচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী নাজমা, বউদি কুলচান এবং ইয়াসিনের এক কন্যাসন্তানের কোনো খোঁজ নেই।
পরিবারের সদস্যদের দ্রুত বাগদা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার সকালে তাঁদের জ্ঞান ফিরলে তারা জানান, সোমবার সন্ধ্যায় আরিফ তাঁদের বাড়িতে এসেছিল এবং দুই বউয়ের হাতে কিছু একটা দিয়ে যায়। এরপর দুই বউ চা তৈরি করে সকলকে খাওয়ায়, যার পর থেকে তারা অচেতন হয়ে পড়েন।আনিসুর শেখ জানিয়েছেন, এর আগেও আরিফ তাঁর স্ত্রী এবং বউদিকে নিয়ে পালিয়েছিল।
তখন পরিবারের ছোট বাচ্চাদের কথা ভেবে তাদের ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু এবার আরিফ পরিকল্পিতভাবে চায়ের সঙ্গে বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে তাঁর বাবা-মা, দাদার দুই মেয়ে এবং তাঁর এক মেয়েকে অচেতন করে দুই স্ত্রী ও এক কন্যাকে নিয়ে পালিয়েছে। আনিসুর বলেন, “এটা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। আরিফ পরিকল্পিতভাবে আমার পরিবারকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
তাঁর বাবা-মাও আরিফের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।অন্যদিকে, আরিফের স্ত্রী সোনিয়া মোল্লা এই ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমি জানতাম আরিফের ওই দুই মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এভাবে দুই বউকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া এবং পরিবারের সদস্যদের অচেতন করে দেওয়া অমানবিক। আমার একটা জীবন আছে, আমার বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ আছে।
আমি চাই আরিফ এবং ওই দুই মহিলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।” সোনিয়া আরও বলেন, তিনি এই ঘটনার ন্যায়বিচার চান যাতে তাঁর এবং তাঁর সন্তানদের জীবন সুরক্ষিত হয়।বাগদা থানায় মঙ্গলবার আনিসুর শেখের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত আরিফ মোল্লা, কুলচান মল্লিক, নাজমা মণ্ডল এবং নিখোঁজ কন্যাসন্তানের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, চায়ের সঙ্গে কী ধরনের বিষাক্ত পদার্থ মেশানো হয়েছিল তা নির্ধারণের জন্য হাসপাতাল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এছাড়া, এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে অভিযুক্তদের গতিবিধি শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।এই ঘটনা মালিদা গ্রামে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এর আগেও আরিফের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু তাকে শাস্তি না দেওয়ায় তার সাহস বেড়েছে। কেউ কেউ এই ঘটনাকে “পারিবারিক এবং সামাজিক কলঙ্ক” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, “একটা পরিবারকে এভাবে ধ্বংস করা কোনো মানুষের কাজ হতে পারে না। পুলিশের উচিত দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা।”এই ঘটনায় আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে কয়েকটি ধারায় মামলা দায়ের হতে পারে, যার মধ্যে অপহরণ, বিষপ্রয়োগ এবং পারিবারিক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
আদানি পাওয়ারকে ধিরাউলি খনিতে উৎপাদনের অনুমোদন কয়লা মন্ত্রকের
পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তের অগ্রগতির উপর নির্ভর করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই ঘটনা কেবল মালিদা গ্রামেই নয়, গোটা উত্তর ২৪ পরগনায় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের উপর এখন সকলের নজর, কারণ ভুক্তভোগী পরিবার এবং আরিফের স্ত্রী ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন।