দুকোটি টাকা আর্থিক তছরুপ, গ্রেপ্তার পঞ্চায়েতের সচিব

মুর্শিদাবাদের (Mursidabad) সুতি ব্লকের বহুতালি গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চদশ কমিশনের প্রায় দুই কোটি (Two Crore) টাকার আর্থিক (Financial) তছরুপের (Scam) ঘটনায় গ্রেপ্তার (Arrest) হলেন পঞ্চায়েতের সচিব…

Financial Scam Secretary Arrest

মুর্শিদাবাদের (Mursidabad) সুতি ব্লকের বহুতালি গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চদশ কমিশনের প্রায় দুই কোটি (Two Crore) টাকার আর্থিক (Financial) তছরুপের (Scam) ঘটনায় গ্রেপ্তার (Arrest) হলেন পঞ্চায়েতের সচিব (Panchayat Secretary) অশোককুমার ঘোষ। দীর্ঘদিন ধরে চলা তদন্তের পর, গতকাল তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং এখন তদন্ত চালাচ্ছে সুতি থানার পুলিশ। এই ঘটনায় সুতি ব্লকের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে, কারণ এমন বিশাল অঙ্কের আর্থিক তছরুপের ঘটনা এলাকায় বেশ আলোচনা তৈরি করেছে।

এলাকায় সম্প্রতি এই বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়, যখন পঞ্চায়েতের হিসাবের মধ্যে বড় গরমিল ধরা পড়ে। ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পঞ্চদশ কমিশনের অর্থ নিয়ে এই তছরুপের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েতের সচিব অশোককুমার ঘোষের বিরুদ্ধে এই তছরুপের অভিযোগ উঠলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই আর্থিক তছরুপের তদন্ত গত কয়েক মাস ধরে চলছিল এবং তদন্তের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেছে, যার ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

   

কীভাবে ঘটল তছরুপ?
পঞ্চদশ কমিশনের অর্থ প্রদান করা হয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য, কিন্তু অভিযোগ রয়েছে যে ওই অর্থের কিছু অংশ কোনভাবেই ঠিকভাবে ব্যয় করা হয়নি। তার পরিবর্তে, সেই অর্থের বেশ কিছু অংশ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। একাধিক প্রোজেক্টের জন্য বরাদ্দ অর্থের মধ্যে গরমিল ধরা পড়েছে, এবং সেই অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা ধরনের ফালতু রেকর্ড তৈরি করা হয়েছে।

একটি প্রাথমিক তদন্তে এই গরমিল এবং তছরুপের বিষয়টি সামনে আসে, এবং এরপরই এ নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়। পঞ্চায়েতের প্রধানও এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরই বিডিও, বা ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার এই বিষয়ে পুলিশে FIR দায়ের করেন। এরপরই পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং গ্রেপ্তার করে অশোককুমার ঘোষকে।

হাই কোর্টে মামলা এবং তদন্ত:
তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে পঞ্চায়েতের তহবিলের সঙ্গে জড়িত আরও ব্যক্তিরা এই তছরুপের ঘটনায় অংশগ্রহণ করেছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি এই বিষয়ে হাই কোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলার তদন্ত করতেই পুলিশ সেক্রেটারির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করে। সুতি থানার পুলিশ এই বিষয়ে আরও তদন্ত চালাচ্ছে এবং সম্ভাব্য অন্য কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখছে।

এই ঘটনায় সুতি ব্লকের রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। অনেকেই এই ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এমনকি কিছু নেতার দাবি, এই দুর্নীতির পেছনে আরো উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকতে পারে। এই কারণে, পুলিশ আরও গভীর তদন্ত করতে পারে, যাতে পুরো চক্রটি সামনে আসে।

ব্লক প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া:
সুতি-১ ব্লকের বিডিও (ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার) এই ঘটনার পরে মন্তব্য করেছেন, “আমার কাছে পঞ্চদশ কমিশনের টাকা গরমিল দেখার পর আমি নিজেই FIR দায়ের করেছিলাম। প্রধানও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এর পরেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং সেক্রেটারিকে গ্রেপ্তার করেছে।”

এছাড়া, সুতি থানার পুলিশ সুপার জানান, “এই তছরুপের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর এবং আমরা পূর্ণ তদন্ত চালাচ্ছি। তদন্তের পরেই অন্য কারও জড়িত থাকার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। যদি কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

এলাকার রাজনৈতিক চাঞ্চল্য:
বহুতালি গ্রাম পঞ্চায়েতের সেক্রেটারি অশোককুমার ঘোষের গ্রেপ্তারির খবর মুহূর্তের মধ্যে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং রাজনীতির মাঠে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বহু রাজনৈতিক নেতারাই এই ঘটনায় মর্মাহত। তাদের বক্তব্য, পঞ্চায়েতের যে টাকা জনগণের উন্নয়নের জন্য দেওয়া হয়েছে, তা যদি তছরুপ হয়ে যায়, তাহলে তা জনস্বার্থের বিরোধী এবং এটি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে।

এলাকার কিছু নেতার মতে, এই ধরনের দুর্নীতি যদি বন্ধ করা না যায়, তবে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস আরও কমে যাবে সরকারের প্রতি। তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে, এই ঘটনা আরও গভীর তদন্তের প্রয়োজন হতে পারে, কারণ এতে কিছু বড় মাথা জড়িত থাকতে পারে।

পরবর্তী পদক্ষেপ:
এখন প্রশ্ন উঠছে, এই তছরুপের ঘটনায় আর কে কে জড়িত থাকতে পারে এবং কিভাবে এই বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছিল? পুলিশ এবং প্রশাসন সজাগ হয়ে তদন্ত চালাচ্ছে এবং শিগগিরই নতুন কোনো তথ্য সামনে আসতে পারে। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সেক্রেটারির বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা হয়েছে। তাছাড়া, এই ঘটনা এলাকার জনসাধারণের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি বড় বার্তা পৌঁছাবে, এমনটাই আশা করছে রাজনৈতিক মহল।