সমবায় সমিতির নির্বাচনে বিজেপির জয়, তৃণমূলের পরাজয়ে তীব্র রাজনৈতিক তরজা

মিলন পণ্ডা, কাঁথি:  পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে সমবায় সমিতির নির্বাচনে (Cooperative Society Election) বড় জয় পেয়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)। রবিবার খড়িপুকুরিয়া…

Triumphs in Khajuri Cooperative Society Election, Defeats TMC in Purba Medinipur Showdown

মিলন পণ্ডা, কাঁথি:  পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে সমবায় সমিতির নির্বাচনে (Cooperative Society Election) বড় জয় পেয়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)। রবিবার খড়িপুকুরিয়া রামকৃষ্ণ পরমহংস সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নির্বাচনে বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা ৯টি আসনের মধ্যে ৬টিতে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে। বাকি ৩টি আসনে জয় পেয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) সমর্থিত প্রার্থীরা। এই জয়কে কেন্দ্র করে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র তরজা। বিজেপি নেতৃত্ব এই জয়কে আসন্ন ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে গ্রামাঞ্চলে তাদের প্রভাব বৃদ্ধির ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে, যেখানে তৃণমূল কংগ্রেস এই ফলাফলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ।

নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই খেজুরি বিধানসভা এলাকায় উত্তেজনা ছিল চরমে। তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কায় খেজুরি থানার পক্ষ থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলে। ভোট গণনার পর দেখা যায়, বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা ৬টি আসনে জয়লাভ করেছে, যা তৃণমূলের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই নির্বাচনে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জিত মণ্ডলের উপস্থিতি সত্ত্বেও দলটি প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করতে ব্যর্থ হয়।

   

কাঁথি সংগঠনীক জেলার বিজেপির সহ-সভাপতি তাপস দলাই এই জয়কে তৃণমূলের উপর জনগণের রায় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “খেজুরি বিধানসভায় তৃণমূল বলে কিছুই নেই। লোকসভা থেকে বিধানসভা, সর্বত্র মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। রঞ্জিত মণ্ডল তার হার্মাদ বাহিনী নিয়ে সমবায় সমিতি দখলের পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু জনগণ তা ব্যর্থ করে দিয়েছে।” তিনি আরও দাবি করেন যে, এই জয় গ্রামাঞ্চলে বিজেপির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রমাণ।

বিজেপির রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই জয়কে “গ্রামে পদ্ম ফোটার” প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি কাঁথির “কন্যা সুরক্ষা যাত্রা” কর্মসূচিতে বলেন, “গ্রামে একের পর এক পদ্ম ফুটছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল বলে কিছুই থাকবে না।” তিনি এই জয়কে বিজেপির জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করে তৃণমূলের উপর তীব্র কটাক্ষ করেন।

Advertisements

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই ফলাফলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, “সমবায় সমিতির নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক প্রতীক থাকে না, তাই এটিকে রাজনৈতিক নির্বাচন বলা যায় না। বিজেপি অহেতুক এই নির্বাচন নিয়ে রাজনীতি করছে।” তারা আরও উল্লেখ করে, সম্প্রতি খেজুরিতে দুই বিজেপি কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তৃণমূল নেতারা দাবি করেন, “২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জনগণ বিজেপির ভণ্ডামি রাজনীতির যোগ্য জবাব দেবে।”

এই নির্বাচনকে ঘিরে উভয় দলের মধ্যে উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক তরজা তীব্র হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম ও খেজুরির মতো এলাকায় বিজেপি ইতিমধ্যেই একাধিক সমবায় সমিতির নির্বাচনে জয়লাভ করেছে, যা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে দলের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়। তবে, তৃণমূলের দাবি, এই জয় কেবলমাত্র স্থানীয় স্তরের এবং এর রাজনৈতিক তাৎপর্য সীমিত।

খেজুরির এই নির্বাচনের ফলাফল আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিজেপি এই জয়কে তাদের গ্রামীণ ভিত্তি শক্তিশালী করার প্রমাণ হিসেবে দেখলেও, তৃণমূল এটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আগামী দিনে এই রাজনৈতিক দ্বৈরথ কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা দেখার বিষয়।