মিলন পণ্ডা, খেজুরি: পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে ফের প্রমাণিত হলো তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool) শক্তি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক ঘাঁটিতেই বৃহস্পতিবারের সমবায় সমিতি নির্বাচনে বিজেপি একটিও আসন জিততে পারল না। খেজুরি ১ ব্লকের মুকূটশীলা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির মোট ৯টি আসনেই তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে।
নির্বাচনের আগে থেকেই খেজুরি জুড়ে ছিল উত্তেজনা। ভোট প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে খেজুরি থানার পক্ষ থেকে ছিল কড়া নিরাপত্তা। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। শুরুর দিকে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায় প্রতিটি বুথে।
নির্বাচন শেষে গণনা শুরু হতেই স্পষ্ট হয়ে যায় তৃণমূলের প্রভাব। প্রতিটি আসনেই বিজেপি প্রার্থীদের বড় ব্যবধানে হারিয়ে তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হন। ফলাফল ঘোষণার পর সবুজ আবির উড়িয়ে, মিষ্টি বিতরণ করে এবং নাচ-গানে বিজয় উদযাপন করেন তৃণমূল নেতৃত্ব, কর্মী ও সমর্থকেরা।
কাঁথি সংগঠনীক জেলায় যুব তৃণমূলের সভাপতি ও খেজুরি ১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জালাল উদ্দিন খান বলেন, “গণতন্ত্রে মানুষের রায়ই শেষ কথা। এই ফলাফলে আবারও প্রমাণ হলো, তৃণমূল মানেই উন্নয়নের প্রতীক। মানুষ উন্নয়নের উপর আস্থা রেখেছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিজেপির স্বৈরাচারী রাজনীতির কারণে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আগামী খেজুরি বিধানসভা ভোটে তারাই যোগ্য জবাব দেবে।”
অন্যদিকে, খেজুরির স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বরা এই ফলাফলকে গুরুত্ব দিতে চাননি। তাঁদের অভিযোগ, “পুলিশ প্রশাসনের মদতে শাসক দলের নেতারা ভোট লুট করেছে এবং বহু মানুষকে ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে।” বিজেপি শিবির দাবি করেছে, এই জয় গণতান্ত্রিক নয়, প্রশাসনিক চাপে আদায় করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভোটের আগেই পটাশপুর ২ ব্লকের পঁচেট গ্রাম পঞ্চায়েতের চন্দনপুর গ্রামে যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক কর্মীসভায় ২০টি বিজেপি পরিবার তৃণমূলে যোগদান করেছিল। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, শুভেন্দু অধিকারীর জেলার একের পর এক সমবায় সমিতি নির্বাচনে বিজেপির পরাজয় এবং ঘাসফুল শিবিরে যোগদান প্রবণতা কি আসন্ন বড় নির্বাচনের ইঙ্গিত দিচ্ছে?
খেজুরির এই ফলাফল শুধুমাত্র স্থানীয় নির্বাচনের সীমাবদ্ধ সাফল্য নয়, বরং রাজ্য রাজনীতির ভবিষ্যৎ সমীকরণেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। শুভেন্দু অধিকারীর প্রভাবশালী এলাকায় তৃণমূলের এই নিরঙ্কুশ জয় বিজেপির জন্য বড় সতর্কবার্তা।
সংক্ষেপে, মুকূটশীলা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির এই ফলাফল দেখিয়ে দিল, খেজুরিতে এখনও তৃণমূলের প্রতি মানুষের আস্থা অটুট। বিজেপির অভিযোগ থাকলেও রাজনৈতিক বাস্তব বলছে, শুভেন্দুর গড়ে ঘাসফুলের সবুজ রঙ আরও গাঢ় হচ্ছে। আগামী বিধানসভা ভোটে এই প্রবণতা যদি বজায় থাকে, তবে পূর্ব মেদিনীপুরে রাজনৈতিক পালাবদলের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।