বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী গত শনিবার বিকালে এক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন, যা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। বাঁকুড়ার বিকনা হাইস্কুল মাঠে মহিলা তৃণমূলের একটি সভায় বক্তব্য রাখার সময় সাংসদ বলেন, “অনেক বেইমান বিশ্বাসঘাতক আছে। এরা তৃণমূলের ছাতার তলায় থেকে ভোটের আগে বিশ্বাসঘাতকতা করে। যারা জোড়াফুলের বিরুদ্ধে গুজুর-গুজুর ফুসুর-ফুসুর করেন, তাদের গ্রামে একঘরে করে দেবেন।” তাঁর এই মন্তব্যের পর থেকে তৃণমূলের অন্দরমহলে উত্তেজনা তীব্র হয়ে উঠেছে।
অরূপ চক্রবর্তীর এমন মন্তব্য, যেখানে দলের ‘বিশ্বাসঘাতকদের’ প্রকাশ্যে একঘরে করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, তা তৃণমূলের মধ্যকার গোষ্ঠীকোন্দল এবং ক্ষমতা নিয়ে অস্থিরতার প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন মাত্র এক বছর দূরে। ফলে, দলের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও গোষ্ঠীকোন্দল আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে তৃণমূলের বিভিন্ন অঞ্চলে দলীয় কোন্দলের খবর আসছে। যেমন, কৃষ্ণনগরে পুরকর্মীদের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দলের ফলে এক কর্মী আহত হয়েছেন। খয়রাশোলে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে প্রাণ গেছে এক তৃণমূল কর্মীর। এমন পরিস্থিতিতে অরূপ চক্রবর্তীর মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, তৃণমূলের অন্দরেই কি এত বিভাজন চলছে? গোষ্ঠী কোন্দল এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার ফলে দলের শীর্ষ নেতারাও কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছেন। অনেক তৃণমূল নেতাই এ বিষয়ে গোপনে স্বীকার করছেন যে, দলের ভিতরে গোষ্ঠীকোন্দল একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের কর্মীরা ভোটের সময় অন্য দলেও চলে যেতে পারেন, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন নেতারা। অরূপ চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে বলেন, “দল করতে হলে একটা দলই করতে হবে। সারা বছর তৃণমূল করব, আর ভোটের সময় টিকিট না পেলে অন্য দলে চলে যাব, এমন কর্মীদের আমাদের দরকার নেই।” এর মাধ্যমে তিনি দলের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা ও দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছেন।
এই মন্তব্যের পর, বিজেপি তৃণমূলকে একহাত নিয়েছে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার জানিয়েছেন, “তৃণমূলের অন্দরেই কোন্দল এতটাই তীব্র যে, কর্মীদের মধ্যে কোনো ধরনের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। টাকা-পয়সার ভাগাভাগি এবং ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে দলের ভিতরে বিশাল অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।”
তৃণমূলের অন্দরে গোষ্ঠীকোন্দল একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ভোটের আগেই দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে উঠেপড়ে লেগেছেন দলীয় নেতারা। তবে, যতই চেষ্টা করা হোক না কেন, দলীয় কোন্দল এবং বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে তৃণমূলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। এরই মধ্যে অরূপ চক্রবর্তীর বক্তব্য আরও জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
তৃণমূলের জন্য এখন একটাই প্রশ্ন— গোষ্ঠীকোন্দল থামাতে কী কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে? কীভাবে দলের ভিতরের বিভাজন মেটানো হবে, তা দেখার অপেক্ষা।